সাগরকন্যা আমতলী প্রতিনিধি ॥
বরগুনার তালতলী উপজেলার ৫নং ছোটবগী পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের ছাদের ভীম ধ্বসে মানসুরা নামের এক ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরওও ৯ জন আহত হয়েছে। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে শনিবার দুপুরে।
জানাগেছে, উপজেলার ৫নং ছোটবগী পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ স্কুল ভবন নির্মাণ করে। ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজ। ওই সময় ভবনটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ওই ভবনের ভীমে ফাটল ধরে পলেস্তারা খসে পড়ে। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা শাকেরিন জাহান ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনিরুজ্জামান রিপনকে অবহিত করেছেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই জরাজীর্ণ ভবনটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা না করে কাস চালিয়ে নেয়ার আদেশ দেন। শনিবার ওই বিদ্যালয়ে প্রথম শিফটের কাস শেষে দ্বিতীয় শিফটের কাস শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টায় তৃতীয় শ্রেনীর বাংলা বিষয়ের কাস চলছিল। ওই শ্রেনীর ১৯ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এ সময় বিদ্যালয় ভবনের ওই কক্ষের ছাদের ভীম ভেঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাথায় পড়ে। এতে ১০ শিক্ষার্থী মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগে আহত হয়। গুরুতর আহত মানসুরা, সাদিয়া, ইসমাইল ও রুমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে ছুরিকাটা নামক স্থানে আহত মানসুরার মৃত্যু হয়। আহত সাদিয়া, ইসমাইল ও রুমাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত রোজমা ও শাহীনসহ চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। স্কুল ছাত্রীর নিহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিভাবকরা ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী করেছেন। নিহত মানসুরার বাড়ী উপজেলার গেন্ডামার গ্রামে। তার বাবার নাম নজির তালুকদার। মানসুরা তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী।
আহত শিক্ষার্থী ইসমাইল, সাদিয়া ও রুমা জানান, বাংলা কাসে শিমু ম্যাডাম আমাদের একটি প্রশ্ন লিখতে দেয়। আমরা ওই প্রশ্নে উত্তর লিখছিলাম। এমন মুহুর্তে একটি বিকট শব্দ হয়ে ছাদের ভীম ভেঙ্গে আমাদের উপরে পড়ে যায়। এতে অনেকজন আহত হয়েছে।
তৃতীয় শ্রেনীতে পাঠদানরত শিক্ষক মোসাঃ শিমু আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীরা লিখতে ছিল এমন মুহুর্তে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে একসাথে ছাদের ভীম ধ্বসে শিক্ষার্থীদের গায়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক আমি শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুম ও কুমকুম আক্তার জানান, বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে মেজেতে ছাদের ভীম পড়ে থাকতে দেখি। পরে ছাত্রদের দ্রুত উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে মানসুরার মৃত্যু হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোঃ শাকেরিন জাহান বলেন, আমি বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি ভবনের ভীমের পলেস্তারা ধ্বসে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে। তিনি আরো বলেন এ ভবনটিতে গত তিন বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে। ভবনটি জরাজীর্ণের বিষয়টি তালতলী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কাজী মনিরুজ্জামান রিপনকে অবহিত করেছি এবং তিনি বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে কিন্তু ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেনি। বাধ্য হয়ে ওই জরাজীর্ণ ভবনেরই পাঠদান করাতে হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, আহত মানসুরাকে হাসপাতালে আনার পূর্বেই মারা গেছে। অপর তিন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা শংঙ্কা মুক্ত।
মেসার্স সেতু এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ কবির উদ্দিন সেতু বলেন, আমার লাইসেন্স দিয়ে ওই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করিনি। কে বা কারা করেছে আমি জানি না?
তালতলী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনিরুজ্জামান রিপন জরাজীর্ণ ভবনের কথা স্বীকার করে বলেন, ২০০২ সালে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সেই ভবন ১৬ বছরের মাথায় ভেঙ্গে শিক্ষার্থী মারা যাবে এটা মেনে নেয়া যায়। যারা ভবন নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে এ বিষয়টি তালতলী উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমার কথায় কোন কর্নপাত করেনি।
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মদ আলী বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এমন কথা আমাকে কেউ জানায় নি। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারিগড়ি ত্রুটির কারণে ভীম ধ্বসে পরেছে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাশ শুভ বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচএকে/কেএস