ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
একই ভবন নির্মাণ করতে দুই ধরনের প্ল্যানের বিষয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, নতুন ট্র্যাডিশন চালু হয়েছে। ভবন নির্মাণে একটা অ্যাপ্রুভড প্ল্যান, আরেকটা থাকছে ওয়ার্কিং প্ল্যান। এ ধরনের ঘটনা আর টলারেট করতে চাই না। ভবন নির্মাণে দীর্ঘদিনের জঞ্জাল জমা হয়েছে, সেগুলো দূর করতে চাই।
শনিবার (৬ এপ্রিল) ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অবৈধভাবে ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত থেকে তিন হাজারের বেশি আদেশ রয়েছে। এর প্রধান কারণ গণ নোটিশ। কোনো একটি ভবনের নির্দিষ্ট ত্রুটির কথা উল্লেখ না করে পুরো ভবনের বিরুদ্ধে একটি গণ নোটিশ দেয়া হতো। ফলে ভবন মালিক আদালতে গিয়ে নোটিশটি স্থগিতের ব্যবস্থা করে নেন। তাই আমি বলেছি, সুনির্দিষ্ট ইস্যু উল্লেখ না করে নোটিশ দেয়া যাবে না। যদি এরপরও রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কোনো কর্মকর্তা এমন কাজ করেন, তাহলে ধরে নেবো- তিনি ভবন মালিককে পার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এর দায়ভার ওই কর্মকর্তাকে নিতে হবে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা বর্তমানের উদ্ভূত পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। যেখানে যা যা করা দরকার তা করা হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে শ ম রেজাউল করিম বলেন, কোনো এলাকায় অবৈধ ভবন নির্মাণ করা হলে, সেই এলাকার তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা দায়ী হবেন। তাই নিজ নিজ এলাকার যত ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে সেসব বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট করতে হবে। একটা ভবন নির্মাণের পর বলবেন, এটাতে সমস্যা রয়েছে তা চলবে না। প্রতি সপ্তাহের অগ্রগতির বিষয়ে রিপোর্ট করতে হবে। আমরা অঙ্কুরেই আঘাত হানতে চাই। পুরান ঢাকার ভবনগুলো রি-ডেভলপমেন্ট করার কথা জানিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, এখনও পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রাতারাতি এত এত পুরাতন আবাসন ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। সেখানকার কিছু ভবনের অবস্থা এতটাই খারাপ, একটা ইটে আঘাত করলে দেখা যাবে পুরো ভবনটি ভেঙে পড়েছে। তাই জমির মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় পর্যায়ক্রমে ভবনগুলো রি-ডেভলপমেন্ট করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর অবস্থা জানতে ২৪টি পরিদর্শন দল গঠন করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এসব দলের সব রিপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। এসব ভবনে যা যা ত্রুটি পাওয়া যাবে তা সমাধান করতে মালিককে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে ঠিক না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুমোদনহীন ঊর্ধ্বমুখী ভবনগুলো সরিয়ে নিতে হবে, অন্যথায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুমোদনহীন ভবনকে কোনোভাবেই বৈধতা দেয়া হবে না, ভেঙে ফেলা হবে। বহুতল ভবনগুলোর অবস্থা দেখার পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভবনগুলোও পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে। পাশাপাশি পরিদর্শনে কি কি সমস্যা পাওয়া যায় সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে -যোগ করেন তিনি। এসব কাজ বাস্তবায়নে কোনো চাপের কাছে বাধাগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন- তাই ঘটনা কী সেটাই মুখ্য। ব্যক্তি কে সেটা মুখ্য নয়। যতো চাপই আসুক কোনোভাবেই বিল্ডিং কোডের বাইরে ভবন হতে দেবো না। মালিক কে তা দেখার বিষয় না, আইন মোতাবেক হচ্ছে কি না সেটাই দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা দখল করে বানানো কয়েকজন প্রভাবশালীর ভবন ভেঙে দেয়া হয়েছে। অপরাধ কে করলো সেটিই মুখ্য বিষয়, কে করেছে সেটি নয়।
‘ফায়ার সার্ভিস ছয়তলার উপরে বহুতল বলছে আর রাজউক ১০ তলার উপরে বহুতল বলছে’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের আলাদা কাজ রয়েছে। কোনটি বহুতল ভবন সেটি নির্ধারণ করা ফায়ার সার্ভিসের কাজ নয়। টানা অগ্নিকা-ের ঘটনায় নাশকতা দেখছেন কি না জানতে চাইলে গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আগুন জ¦লেছে, আগুন জ¦লছে ও আগুন জ¦লবে। এছাড়া, আরো কয়েকজন আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এখন এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে, শুধুমাত্র শট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে নাকি এর পেছনে অন্য কারণও আছে। নতুন বিল্ডিং কোড আইন আগামি ২-১ সপ্তাহের মধ্যেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। শ ম রেজাউল করিম বলেন, ২০১৭ সালের শেষদিকে আইনটি ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে একটা সমস্যা তৈরি হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আমরা বিষয়টা সমাধান করবো। ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়া হবে। এর মধ্যে তারা ব্যবস্থা না নিলে ভেঙে ফেলা হবে। অগ্নিকা-ের পর নেয়া নানা পদক্ষেপ একসময় স্থবির হয়ে পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। প্রতি মাসে ব্রিফিং করে এর অগ্রগতি জানাবো। পরিবেশ সম্মত, আধুনিক ও ঝুঁকিমুক্ত আবাসন নিশ্চিতই আমাদের অঙ্গীকার।
এফএন/এমআর