চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশনের মিয়াজানপুর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসায় গোপনে ভূয়া নিয়োগ দেখিয়ে কয়েক বছর যাবত একজন প্রভাষক ও একজন শিক্ষকের নামে কয়েক লক্ষ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা ভোগ করলেও তারা প্রতিষ্ঠানে আসেন না। ভূয়া নিয়োগ দেখিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষ মাও. আবুল কাশেমসহ ৫ জনকে আসামী করে চরফ্যাশন থানায় মামলা হয়েছে।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক বাদী হয়ে বৃহষ্পতিবার (৪ এপ্রিল) মামলাটি দায়ের করেছেন । মামলায় ভূয়া নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক মো.আলী, প্রভাষক মিজানুর রহমান, শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন ও রেহানা বেগমকেও আসামী করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য দূর্নীতিদমন কমিশনে পাঠানো হবে বলে থানার ওসি জানিয়েছেন।
জানাগেছে, গেল বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমীন আকষ্মিক পরিদর্শন কালে মাদ্রাসাটিতে দূর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন পরিদর্শন কালে মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে গোপনে ভূয়া নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জন প্রভাষকসহ ১৩ শিক্ষক-কর্মচারীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে গড় অনুপস্থিত ২ শিক্ষকও মাদ্রাসায় ছিলেন না । ৩ জন মোবাইল ফোনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন এবং অপর ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী কোন পূর্বানুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের সুত্রে জানাগেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারী অধ্যক্ষ আবুল কাশেম অবসরে যান। তিনি অবসরে যাওয়ার পর গোপন নিয়োগ দেখিয়ে ভূয়া শিক্ষক-কর্মচারীর নামে বেতন-ভাতা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাতের ঘটনাটি প্রকাশ পায়। যার ফলে শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন এবং জুনিয়র শিক্ষক রেহানা বেগম নতুন করে আবিষ্কৃত হন। আবিস্কৃত এই দুই শিক্ষক অধ্যক্ষের অবসরের পর থেকে বেতন-ভাতা গ্রহন করলেও নিয়োগের পর থেকে কখনও কর্মস্থলে আসতেন না। এছাড়াও আরো ২ জন প্রভাষক আবিস্কৃত হন। একজন আরবীর প্রভাষক মিজানুর রহমান এবং অন্যজন প্রভাষক মোহাম্মদ আলী। এ দু’জন প্রভাষককে প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক-কর্মচারী চেনেন না এবং তারা কোনদিন প্রতষ্ঠানে আসেননি। সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ মাও. আবুল কাশেম ২০১৩ সন থেকে বিভিন্ন সময়ে ভূয়া নিয়োগ দেখিয়ে তাদের সহি-স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক হিসেব থেকে তাদের নামীয় বেতন-ভাতা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করে আসছেন ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যাছাই-বাছাইকালে গোপনে ভূয়া নিয়োগ প্রাপ্ত দুই প্রভাষকসহ বেশীর ভাগ শিক্ষক-কর্মচারীর বিল ফরমের স্বাক্ষরের সাথে প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতার স্বাক্ষরের অমিল পাওয়া গেছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও. ওমর ফারুক এই অমিলের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিল ফরমে স্বাক্ষর নিতেন। ওই বিল ফরমে ভূয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম থাকতো না। স্বাক্ষর নেয়ার পর ওই বিল ফরম ছিড়ে ফেলে নতুন বিল ফরমে ভূয়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম অন্তভূক্ত করে সব শিক্ষক কর্মচারীদের স্বাক্ষর তিনি নিজে দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতেন। সদ্য সাবেক অধ্যক্ষের এমন কৌশলী কান্ডের ফলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং ম্যানেজিং কমিটি ভূয়া শিক্ষকদের বিষয়ে জানতে পারেননি। এ কারণে বিল ফরমে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বাক্ষরের সাথে প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতার স্বাক্ষরের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, অধ্যক্ষ পদ থেকে মাও. আবুল কাশেমের অবসরের পর থেকে একের পর এক অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র সামনে আসছে। ইতিমধ্যেই মিজানুর রহমান নামে প্রভাষক পদে ভূয়া নিয়োগ দেয়া একজনের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষ মাও. আবুল কাশেমের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করে জানান, আমি ঢাকা আছি। দেশে এসে কথা বলবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমীন জানান, অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত অধ্যক্ষ মাও আবুল কাশেমসহ সংশিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চরফ্যাশন থানার ওসি ম.এনামুল হক জানান, জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক অধ্যক্ষসহ ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলাটি তদন্তের এখতিয়ার থানা পুলিশের নেই। তাই মামলাটি দূর্নীতি দমন কমিশনে হ্স্তান্তর করা হবে ।
এমএএইচ/এমআর