ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সরকারের নানা ধরনের প্রণোদনায় কৃষকরা বোরো চাষে উৎসাহী হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে সারা দেশে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষকরা ইরি-বোরোর আবাদ করেছে। যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বেশি। বোরো চাষে উদ্বুদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে সার, বীজ ও নগদ সহায়তা। সারা দেশে চলতি মৌসুমে ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। তবে ঠিক কী পরিমাণ বেশি জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে তার চূড়ান্ত হিসাব এখনো হয়নি। বিগত ২০১৮ সালে কৃষকরা ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করেছিল। এবার তার চেয়ে কম লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গতবছরের চেয়ে বেশি জমিতে বোরোর চাষ হচ্ছে। আর ২০১৭ সালে দেশে ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। বোরো ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ২০১৮ সালে এক কোটি ৯৫ লাখ টন এবং ২০১৭ সালে এক কোটি ৮০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে ইতিমধ্যে বোরো রোপণ শেষ হয়েছে। এ বছর কৃষকরা প্রায় ৮৮ শতাংশ জমিতে উফশী জাত, ১১ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড এবং বাকি জমিতে স্থানীয় জাতের বোরোর আবাদ করেছে। দুর্যোগে ক্ষতি না হলে এবারের উৎপাদনও গতবছরের চেয়ে বেশি হবে কৃষি সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা আশাবাদী। চলতি অর্থবছরে আউশ, আমন ও বোরো মিলে মোট তিন কোটি ৬৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তার মধ্যে আউশ, আমন ও বোরোর অংশ যথাক্রমে ২৭ লাখ টন, এক কোটি ৪১ লাখ টন এবং এক কোটি ৯৬ লাখ টন। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ২০ হাজার টন ও আমনে এক কোটি ৪৩ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার বিগত ২০১৮ সালের শেষ দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৭০ জন কৃষকের জন্য ৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ওসব প্রণোদনার টাকা গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটি বেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ, গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল চাষের জন্য চাষিদের দেয়া হচ্ছে। এ বছর বোরো চাষের জন্য ৭১ হাজার ৭০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তাতে নগদ অর্থ, বীজ ও সার রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বরাবরই দেশে চালের উৎপাদন কম হতো। তবে ফলন ভালো হওয়ায় গেলবছর পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিগত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, সরকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টন, যার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৪৭ লাখ টন। এর পরের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ। আর বিগত অর্থবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ওই বছর (২০১৭-১৮ অর্থবছর) মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন। আর উৎপাদন বেড়ে হয়েছিল ৩ কোটি ৬২ লাখ টন।
এদিকে ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতিবছরই আবাদের পরিমাণ ও ফলন বেশি হয়। এ মৌসুমেই দেশের মোট চালের ৫৬ শতাংশ উৎপাদন হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আমন ও আউশ। তবে অধিক মাত্রায় সেচে খরচ ও ধান বিক্রিতে কম মুনাফার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বোরো উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তবে ইতিমধ্যে সরকার বোরো ধান ও চাল কত টাকা কেজি দরে কিনবে সে ঘোষণা দিয়েছে। সরকার এ মৌসুমে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ বোরো চাল কিনবে। প্রতি কেজি চাল কিনবে ৩৬ টাকায়, যা গতবছর কিনেছিল ৩৮ টাকায়। তাছাড়া ৩৫ টাকা কেজি দরে বোরোর দেড় লাখ টন আতপ চাল, ২৬ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন ধান এবং ২৮ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন গম কিনবে সরকার। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে এই ধান, চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে।
অন্যদিকে সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার কথা থাকলেও মিলারদের কাছ থেকে তা কেনা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বাজারে কৃষক ঠিকঠাক দাম পায় না। আর ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণেই কৃষকরা চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও ব্যস্তবায়ন) আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, এবার বোরো রোপণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের নানা ধরনের প্রণোদনায় কৃষকরা বোরো চাষে উৎসাহী হচ্ছে। যেহেতু ভাত এদেশের প্রধান খাদ্য, সেহেতু কৃষককে ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে। আর দুর্যোগ না হলে আশা করা যায় এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে।
এফএন/এমআর