ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ছাত্রলীগের ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে দফায় দফায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদন পেলেই প্রকাশ করা হবে এই কমিটি।
বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিষয়টি জানিয়েছেন। এদিকে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা, সাবেক দুই নেতাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি এবং নেতাদের বাসার সামনে আড্ডা বেড়ে গেছে। যদিও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, পেছনে ঘোরাঘুরি আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে পদ পাওয়া যাবে না। যোগ্যতার বিবেচনায় পদ দেওয়া হবে। পদপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ জায়গায় যোগ্য, দক্ষ, ছাত্রদের প্রিয় ও মানবিক হতে হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গেল বছরের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় এ সম্মেলন। এর আগে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। জাতীয় সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। একই দিনে ঢাবি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ৫ এপ্রিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং রাজধানীর তিন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। সম্মেলনের পর কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সময় নেন প্রায় পাঁচবার। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ঢাবির সিনেট ভবনে ছাত্রলীগের নির্বাচনী বর্ধিত সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় বিগত বছরের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। যদিও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়। তবুও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এরপরও বিগত ডাকসু নির্বাচনের আগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সভায় নির্বাচনের ২০ দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এর আগে ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের প্রায় সাত মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।
এ ছাড়া ২৭তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের চার মাস পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল। যদিও ২৯তম কেন্দ্রীয় কমিটি প্রায় ১০ মাস পর ঘোষণা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে সংসদের কার্যকারিতা থাকবে না। বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতিতে বর্ধিত সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে কমিটি তিন মাসের জন্য সময় বাড়াতে পারে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে জেলা ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর। সে হিসাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি এরইমধ্যে নির্ধারিত সময়ের এক-চতুর্থাংশ পার করেছে। ঢাবি ও ঢাকা মহানগর শাখা কমিটি নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক পার করেছে।
এদিকে ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১০৯টি সাংগঠনিক ইউনিট, ৫০টি আন্তর্জাতিক ইউনিট, অর্ধসহ¯্র উপজেলা ইউনিট এবং চার হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটেও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্ধারিত দুই বছরের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া আছে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে। এ ছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে কতজন সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন, সে বিষয়েও উল্লেখ করা আছে।
বলা হয়েছে, সংগঠনটিতে সহসভাপতি ৪১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১০ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ জনসহ মোট ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির সঙ্গে ঢাবি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও প্রকাশ করা হবে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিতে বাকি আছে। আশা করি আগামি রোববার, সোমবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে। তবে এর মধ্যে না হলে আগামি সপ্তাহের মধ্যেই হবে বলে আশা করছি।
এফএন/এমআর