ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাতে না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, যেহেতু তারা আমাদের একবারে প্রতিবেশি, সেহেতু আমরা তাদের সাথে সংঘাতে যাব না। বরং তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের যেন তারা ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই প্রচেষ্টাই আমাদের অব্যাহত থাকতে হবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব যেন, সেইভাবে সকলে দায়িত্ব পালন করেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই ছিল চার লাখের মতো রোহিঙ্গা। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে রেখে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা আটকে রয়েছে।
মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা আছে। একাত্তর সালে এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ছিল। কাজেই তাদেরকে (রোহিঙ্গা) পুনর্বাসন করতে হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সাথে আমরা ঝগড়া বাধাতে যাইনি। আমরা আলোচনা করেছি। আমরা চুক্তি সম্পন্ন করেছি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখনো কাজ করে যাচ্ছি। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি শান্তিপূর্ণ হলেও কেউ আক্রমণ করলে তার জবাব দেওয়ার মতো প্রস্তুতিও থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। কিন্তু কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে তার যেন যথাযথ জবাব আমরা দিতে পারি আর আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যেন রক্ষা করতে পারি, সেই প্রস্তুতিটা সসবসময় আমাদের থাকতে হবে। অন্তত আমি এটুকু বলব যে, আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করব না বা যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা যে নীতিমালাটা দিয়ে গিয়েছিলেন যে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি এবং সেই নীতিমালা নিয়েই কিন্তু চলছি। কারো সঙ্গে কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয় জানিয়ে তিনি মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি বলেন, দুটি দেশই আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সেখানে আবার জয়ী হওয়া; এটা আমাদের কূটনৈতিক বা টেকনিক্যাল দিক থেকে ক্রিটিক্যাল ছিল। খুব একটা কঠিন দায়িত্ব ছিল। সেটা আমরা করতে পেরেছি। শান্তি রক্ষার জন্যও প্রস্তুতি থাকা দরকার বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বে প্রযুক্তি ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হওয়ার কথা উল্লেখ করে শান্তি মিশনে যাওয়া বাংলাদেশীদের যুগোপযোগী থাকার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা সেখানে যাবে সব বিষয়ে তারা পারদর্শী থাকবে সেটাই আমি চাই। এটা একান্তভাবে দরকার, সেই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা এবং উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। তার সরকারের সময় সশস্ত্রবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে আমরা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা বিশাল। শক্তির দিক থেকে বা মানসিক শক্তির দিক থেকে আমাদের সেইভাবেই তৈরি হতে হবে। প্রশিক্ষণের দিক থেকেও তৈরি হতে হবে। যেন যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার মত শক্তি আমরা অর্জন করতে পারি এবং মর্যাদার সঙ্গে যেন চলতে পারি। বিশ্বে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি।
প্রতিরক্ষা নীতিমালা, ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা আছে। সেটা নিয়েই আমরা এগুতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন লাগোয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি থাকার সময় এখানেই অফিস করতেন। শেখ হাসিনা সেসময়ের কথা স্মরণ করে একে ‘অনেক স্মৃতিবিজড়িত জায়গা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারপ্রাপ্ত সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামছুল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়াসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর