ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
২৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন ও ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ১৬টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ২০টি শিল্প কারখানার ভিত্তিস্থাপন করেন তিনি। এ ছাড়া আরও ৫ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চিফ অপারেটিং কর্মকর্তা (সিওও) মো. ফখরুদ্দীনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শিল্প স্থাপনের উপযোগী বাগেরহাটে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরে বে অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল, রূপগঞ্জ উপজেলায় সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইস্ট-ওয়েস্ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কর্ণফুলী ড্রাই ডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন প্রতিষ্ঠিত ১৩ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনী উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল), মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল-২, মিরসরাই উপজেলার বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্ক, বাগেরহাটে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল-২, কক্সবাজার জেলায় মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিরাজগঞ্জ সদর ও বেলকুচি উপজেলায় সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় আকিস অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার বসুন্ধরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার স্ট্যান্ডার্ড গ্লোবাল ইকোনমিক জোন এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার আরিশা ইকোনমিক জোনের উন্নয়নের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ সহ ৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ এ উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে বেজা-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ইকোনমিক জোনের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানায়, বেজা’র ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এরইমধ্যে শিল্পের চাকা ঘুরছে ছয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে। কারখানা স্থাপনের জন্য পুরোপুরি তৈরি আরো ৫টি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৬৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বেজা। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে। যেগুলোর ছয়টিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে; কারখানার স্থাপনের জন্য প্রস্তুত আরো ৫টি। বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৯টি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। নতুন ৫টিসহ মোট ১১টিতে স্থাপন করা হচ্ছে আরো ২১টি কারখানা। এতে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আর কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০ হাজার মানুষের। সংস্থার হিসাবে, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার। যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি অঞ্চলের সঙ্গে সরকারি অঞ্চল বাস্তবায়নও এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। এরইমধ্যে মিরসরাইসহ দুই অঞ্চলে কারখানা স্থাপন শুরু হয়েছে। কারখানা স্থাপনের জন্য প্রস্তুত আরো দু’টি অঞ্চল। অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হোন্ডা, টিআইসির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগের এ ধারা ধরে রাখতে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতায় জোর দিচ্ছেন বেজা চেয়ারম্যান।