ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের সব বিভাগীয় শহরে অটিজম পরিচর্যা কেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার (২এপ্রিল) দ্বাদশ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পিতামাতা ও অভিভাবকহীন নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য সরকার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও বগুড়ায় ৫০ আসনের পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। “পর্যায়ক্রমে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্রে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, খেলাধুলাসহ সকল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সন্তান প্রতিবন্ধী হলে অযথা মাকে দোষারোপ না করতেও অনুরোধ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “একটা শিশু যখন জন্ম নেয় সে যে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী হবে এটা তো ওভাবে জানা থাকে না। শিশুটা যখন জন্ম নেয় মাও দায়ী থাকে না, বাবাও দায়ী থাকে না। কেউই কিন্তু দায়ী থাকে না। শিশুটা সাধারণ মানুষের মতো হয়নি এটা আল্লাহতালার ইচ্ছা। “অনেক সময় দেখি মায়ের ওপর দোষারোপ করা হয়। আশা করি ভবিষ্যতে মাকে আর কেউ অযথা দোষারোপ করবেন না। এটা মায়ের জন্য কষ্টের।”
তিনি বলেন, “আমি এটুকুই চাইব, এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী যেন আর অবহেলার শিকার না হয়। তারা যেন আমাদের সমাজে তাদের যোগ্য স্থান পায়। তারা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই, বোন। সে কথাটা মনে করে সবাই অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধীদের সাথে নিয়ে চলবেন সেটাই আমি চাচ্ছি।” অটিস্টিক এবং প্রতিবন্ধীরাও যে সাধারণ মানুষের মতো সবকিছু করতে পারে সে প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই যারা অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী তারা যেন সমাজের বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। তাদের যেন কেউ বোঝা মনে না করে। তাদের মাঝে কিন্তু অনেক ট্যালেন্ট আছে।” এসময় প্রধানমন্ত্রী কাউকে একটি পানির বোতল এনে দিতে বলেন। এরপর পানির বোতল হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “এই পানিটা.. এটা কারা তৈরি করে আপনারা জানেন.. এটা কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তৈরি করে। দুর্ভাগ্য হল আমার অফিসেও বলে এই পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমি যখন বলি আমার জন্য হয়তো অন্য ব্র্যান্ডের পানি যথেষ্ট নিয়ে আসে। “এটা যেহেতু আমাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা করে এর বোতলগুলো উন্নত মানের করা, ছোট ছোট বোতল করা- সেগুলো আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু এটাকে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে কারও কারও আন্তরিকতার একটু অভাব দেখি। আমার অফিসের সবাই আছে এখানে। আমি আশা করি আজকের দিনের পরে এই পানি নেবে। প্রধানমন্ত্রী এ কথায় মিলনায়তনের সবাই করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার সমাজকল্যাণ পরিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের ৪৭টি সাধারণ বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমন্বিত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। সে সময়ের বাস্তবতায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূলধারার বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম ছিল প্রগতিশীল, যুগোপযোগী ও কার্যকর একটি পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ আইন পাস করেছে। এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিধিও প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’। এ পর্যন্ত সরকার এই ট্রাস্টকে ৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। ট্রাস্ট থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮১১ জন অস্বচ্ছল নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১২০০ জনকে ৭০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, সরকার ১০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭০০ টাকা হারে ভাতা এবং ৯০ হাজার অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীকে মাসিক ৭০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা হারে শিক্ষা উপবৃত্তি দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এফএন/এমআর