বেসরকারি ব্যবস্থাপণায় ইজারাদারের লাভ হলেও লোকসানে রেলওয়ে

প্রথম পাতা » জাতীয় » বেসরকারি ব্যবস্থাপণায় ইজারাদারের লাভ হলেও লোকসানে রেলওয়ে
মঙ্গলবার ● ২ এপ্রিল ২০১৯


বেসরকারি ব্যবস্থাপণায় ইজারাদারের লাভ হলেও লোকসানে রেলওয়ে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালনায় ইজারাদারের লাভ হলেও লোকসান গুনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী ট্র্যাক, সিগন্যাল, স্টেশন, কোচ, ইঞ্জিন, জ¦ালানি, লোকোমাস্টার, পরিচালক, স্টাফ সবই রেলওয়ের। ইজারাগ্রহীতার দায়িত্ব শুধু ভাড়া আদায় করা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেন নিয়ে রেলওয়েতে প্রতিদিনই বিস্তর অভিযোগ আসছে। দুটি টিকিট না কিনলে আসন না দেয়া, অতিরিক্ত যাত্রী তোলা, ছাদে যাত্রী ওঠানোসহ নানা অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে রেলওয়ে। তার বাইরে বেসরকারি ট্রেনগুলোকে শিডিউলে বাড়তি সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ে সারা দেশে মোট ৭৩টি মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়েছে। ওসব ট্রেন বোনারপাড়া-সান্তাহার, খুলনা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-আরএনপি, সান্তাহার-লালমনিরহাট, সান্তাহার-লালমনিরহাট-সাšন্তহার, খুলনা-পার্বতীপুর, খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট, পার্বতীপুর-চিলাহাটি, চট্টগ্রাম-সিডিআর, রাজশাহী-পার্বতীপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মোহনগঞ্জ, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঈশ্বরদী-ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বুড়িমারী-লালমনিরহাট, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, পোড়াদহ-গোয়ালন্দ ঘাট, পোড়াদহ-রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট, জামালপুর-ঢাকা, ঢাকা-আখাউড়া-ঢাকা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সেকশনে চলাচল করছে। তার বাইরে ব্রড সার্ভিসে বেসরকারি খাতে দেয়া হয়েছে আরো ১৮টি ট্রেন। ঢাকা-চট্টগ্রামে ৪টি, ঢাকা-সিলেটে ২টি, ঢাকা-কিশোরগঞ্জে ২টি এবং ঢাকা-মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনে চলছে একটি করে ব্রড সার্ভিস।
সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দিনে মোট ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যেই ১৩টিই চলছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। সবগুলোই ইজারা নিয়েছে এসআর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় যখন ওসব ট্রেন চলতো তখন একটি ট্রেনের বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতে দেয়ার পর তা বেড়ে ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একইভাবে ১ কোটি ৫৩ লাখ থেকে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেইলের আয়। ৭২ লাখ টাকা থেকে বেড়ে মহুয়া এক্সপ্রেসের আয় দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তাছাড়া ঢাকা-জামালপুর রুটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রেন (জামালপুর কমিউটার) চালিয়ে রেলের আয় হতো বছরে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছাড়ার পর একই ট্রেন থেকে বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা আয় করছে ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান এলআর ট্রেডিং। ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান লাভে থাকলেও ওই রুটে ট্রেন পরিচালনায় প্রতিদিনই লোকসান গুনছে রেলওয়ে। কারণ এলআর ট্রেডিং ভাড়া গুনলেও জামালপুর কমিউটারের কোচ, ইঞ্জিন, জ¦ালানি থেকে শুরু করে স্টাফ পর্যন্ত সব ব্যয় রেলওয়ের। দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার নামে চলছে আরেকটি বেসরকারি ট্রেন। ওই ট্রেন রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় থাকাকালে বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়ার পর আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সেখানেও বাড়তি আয়ের পুরোটাই চলে যাচ্ছে ইজারা নেয়া টিএম ট্রেডিংয়ের কাছে। এমন অবস্থায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেন পরিচালনা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম-সিডিআর, রাজশাহী-পার্বতীপুর, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঈশ্বরদী-ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর-ঢাকা, ঢাকা-আখাউড়া-ঢাকা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী বেসরকারি ট্রেনের ইজারার মেয়াদ চলতি বছর শেষ হবে। ২০২০ সালে শেষ হবে আরো অন্তত ৭টি রুটে চলাচলকারী বেসরকারি ট্রেনের ইজারা চুক্তির মেয়াদ। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালানো বিষয়ে বাড়তি দামে টিকিট বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। গত ২৫ মার্চ ময়মনসিংহের গৌরীপুরে দ্বিগুণ দামে বেসরকারি ট্রেন ‘বলাকা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করায় অবসরপ্রাপ্ত এক পোস্টমাস্টারকে মারধর করা হয়।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম জানান, মূলত জনবল সংকটের কারণেই বিভিন্ন সময়ে ওসব ট্রেন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৩টি ট্রেন চলছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, বেসরকারি ট্রেন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনগুলো আগেই ইজারা দেয়া হয়েছে এবং ইজারার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। ফলে এই মুহূর্তে বেসরকারি ট্রেন বন্ধ করার উপায় নেই। তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে নতুন করে আর কোনো ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হবে না। পাশাপাশি যেগুলোর ইজারার মেয়াদ শেষ হলে সেগুলোর মেয়াদও বাড়ানো হবে না। তবে সেজন্য রেলওয়ের লোকবল বাড়ানো জরুরি। আগামি ২০২০ সালের পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আর কোনো ট্রেন চলবে না।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৯:৩৮ ● ৩৮৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ