বিমানবন্দর কার্গো হাউসে মালামাল খালাসে আগ্রহ নেই আমদানিকারকদের
প্রথম পাতা »
জাতীয় »
বিমানবন্দর কার্গো হাউসে মালামাল খালাসে আগ্রহ নেই আমদানিকারকদের
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউসে শত শত টন পণ্যের স্তূপ জমলেও খালাসে আগ্রহ দেখাচ্ছে না আমদানিকারকরা। এমনকি বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। ফলে নানা ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অবস্থা চলছে। এ সমস্যার সমাধানে সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করলেও আমদানিকারকরা তা কাজে লাগাচ্ছেন। ফলে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনকে বদনামের ভাগিদার হতে হচ্ছে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন আমদানি হয়ে কমপক্ষে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টন কার্গো মালামাল আসে। ওই মালামাল উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি বিমানের কার্গো হাউসে নেয়া হয়। আর খালাসের আগ পর্যন্ত মালামালগুলো সেখানেই স্তূপাকারে জমা থাকে। শুক্র ও শনিবারসহ প্রতিদিনই মালামাল আসে। আগে ওসব মালামাল খালাস প্রক্রিয়া বেশ জটিল ছিল। তখন শুধুমাত্র সপ্তাহে অফিস খোলার দিনই মালামাল খালাস করা হতো। ফলে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার যে পরিমাণ মালামাল আসতো তা খালাস করা হতো না। তাতে কার্গো হাউসে মালামালের স্তূপ জমতো। সপ্তাহের দুদিনে যদি ৪শ’ টন মালের স্তূপ জমে মাসে তা দাঁড়াতো ১৬শ’ টনের মতো। যা সপ্তাহের ৫ দিন দিনরাত কাজ করেও খালাস সম্ভব হতো না। ফলে কার্গো হাউসের মালের স্তূপ ছড়িয়ে যেত আশপাশের এপ্রোন এরিয়ায়। আর খোলা আকাশের নিচেই পড়ে থাকত ওসব মালামাল। তাতে অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতো। এমন অবস্থায় সম্প্রতি বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারও কার্গো হাউস খোলা রেখে মাল ডেলিভারি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই মোতাবেক সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও কাস্টমস ছুটির দিনেও কার্গো হাউস খোলা রাখার ব্যবস্থা নেয়। সার্বক্ষণিক কার্গোর ব্যাংক শাখা খোলাসহ অন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত করে সিভিল এভিয়েশন। কিন্তু তারপরও ওই মালামাল খালাসে আমদানিকারকরা আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে সব সুবিধা দেয়ার পরও কার্গো হাউসে মালামালের স্তূপ জমছে।
সূত্র জানায়, প্রতি শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন বিমানে যে পরিমাণ মালামাল আসে, খালাস হয় তার ১০ ভাগের একভাগ। বাকি সব মালামাল খালাসের অপেক্ষায় পড়ে থাকে। ওই হিসেবে প্রতি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৫শ’ টন মালামাল জমে যায়। আর প্রতি মাসে তখন যে পরিমাণ কার্গো জমে থাকে তা বাকি সময়ে সরানো সম্ভব হয় না। মালামাল খালাসের জন্য বিমানের পক্ষ ছুটির দিনেও প্রয়োজনীয় জনবল সেখানে কর্মরত থাকে। কিন্তু আমদানিকারকরা তুচ্ছ অজুহাতে মালামাল সরিয়ে না নেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না। আর অন্য কারোর পক্ষে ওসব মালামাল বের করে ফেলা দেয়াও সম্ভব নয়।
এদিকে আমদানিকারক বলছেন, পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকরা আগ্রহী। কিন্তু সিভিল এভিয়েশন আর বিমান সেবা দিলেই তো সব হয় না। বরং যে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে মালামাল আমদানি করা হয় ওই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাও খোলা রাখতে হবে। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। তারপরও বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যায় কিনা তা আগে বের করতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, বিমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করার পরও আমদানিকারকরা নানা অজুহাতে মালামাল খালাস করছে না। তারা এলসি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকায় মাল খালাস করতে পারছে না বলে নানা অজুহাত দেখায়। সেজন্য সপ্তাহে ছুটির দুদিন মালামাল খুব কম খালাস হয়।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক জানান, বিমানবন্দরের কার্গো হাউস থেকে মালামাল খালাসে যে ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার শুক্র ও শনিবার তার সবই দেয়া হচ্ছে। সিভিল এভিয়েশন ও বিমানের প্ক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের ওপর দায় চাপানোর কোন সুযোগ নেই। এখন আমদানিকারকরা যদি ওই মালামাল খালাস না করে তাহলে সেখানে সাময়িক স্তূপ জমাটা স্বাভাবিক। তবে সেজন্য খুব শিগগির আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাদের আমদানি পণ্য খালাসে উদ্বুদ্ব করা গেলে কার্গো হাউসে আর স্তূপ জমবে না।
এফএন/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৩:৩৮ ●
৪৩৯ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)