আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হলেও বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় নোট ও গাইড বই বিক্রির রমরমা বানিজ্য চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকার নির্ধারিত গ্রামার বই খুঁজে পাওয়া যায়না কোথাও।
অভিভাবকসূত্রে জানা গেছে, ২য় শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন গাইড ও বাংলা-ইংরেজী গ্রামার বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থার সাথে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব নিষিদ্ধ গাইড ও গ্রামার বই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে চালু করেছেন। লাইব্রেরীগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোন গ্রামার বই খুঁজে পাওয়া না গেলেও নামী বেনামী বহু প্রকাশনীর গ্রামার বই সেখানে রয়েছে। উপজেলায় ৯৬টি প্রাথমিক, ৩৮টি মাধ্যমিক, ১০টি মাদ্রাসা ও ৭টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু শিক্ষক এই গাইড ও গ্রামার বইয়ের অবৈধ বাণিজ্যের সাথে নিজেদের জড়িত রেখেছেন। এক একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী অনুযায়ী শিক্ষকরা গাইড ও গ্রামার বই কিনতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিচ্ছে। শিক্ষকদের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে। কিন্তু উপজেলার বিদ্যালয়গুলো ঘুরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষক নির্ধারিত গাইড ও গ্রামার বই দেখা গেছে। একইভাবে উপজেলার প্রাথমিক, মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারী বিধিনিষেধের পরেও কমিশন বানিজ্যের কারণে দেদারসে নিষিদ্ধ গাইড ও গ্রামার বই বেচাকেনা চলছে। অনেক শিক্ষার্থীকে মূল পাঠ্যবই নিয়ে বিদ্যালয়ে না গেলেও গাইড ও গ্রামার বই নিয়ে ক্লাশে যেতে দেখা গেছে। শিক্ষকরাও তা দেখেও না দেখার ভান করছেন। আবার অনেক শিক্ষক গাইড বই দেখেই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমিশন প্রদান ও বিভিন্ন উপটোকনের মাধ্যমে করে এসব নিষিদ্ধ বই বাজারজাত করে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা ওই বই কিনতে শিক্ষার্থীদের হাতে তালিকা ও মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দেন। বর্তমানে বাজারে লেকচার, পাঞ্জেরী, পপি, জুপিটার, অরবিট, নব পুঁথিঘর, কাজল ব্রাদার্স, দিগন্ত, কম্পিউটার, আল আরাফা, অনুপম, অনামিকা, আদিলসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর অবৈধ নোটবই দোকানে তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা হয় দোকানগুলোতে। এসব গাইড সরকারীভাবে বিক্রি নিষিদ্ধ তাকলেও তা মানছে না বিক্রেতারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্দেশমত প্রকাশনীর বই কিনতে হচ্ছে। নির্দেশমত গাইড বই না কিনলে শিক্ষকদের গালমন্দ শুনতে হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট ও গাইড বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তালিকানুযায়ী নোট ও গাইড বই না কিনলে শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা সদরের এক বই বিক্রেতা জানান, বাজারে প্রচলিত গাইড ও নোট বইগুলো শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসছে। গাইড ও নোট বই পড়েনা এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। দোষ হয় শুধু বইয়ের দোকানদার ও প্রকাশনীর। অথচ বহু শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ছেলেমেয়েরাও গাইড ও নোট বই পড়ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নোট ও গাইড বই ব্যবহার না করার জন্য প্রত্যেক বিদ্যালয়ে বলে দেয়া হয়েছে। নোট ও গাইড বই বিক্রি নিষেধের ব্যাপারে আমাদের অফিসে সরকারীভাবে আমার কোন লিখিত পাইনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল হক জানান, প্রত্যেক বিদ্যালয়ে গাইড বই ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলা আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, বাজারে যেসমস্ত নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রয় হচ্ছে তা স্কুলগুলোতে না পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের ডেকে নিষেধ করা হবে।