ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
গ্যাস উত্তোলনে এদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি খরচ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। যদিও আশা করা হয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাপেক্সের খরচ কম পড়বে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। মূলত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ নিয়েই দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়েছে বাপেক্স। অথচ বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে প্রায় আড়াইগুণ বেশি দামে বাপেক্স এর গ্যাস কূপ খননের কাজ বিদেশী কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। আর যেসব বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে তারা নিজেরা কাজ না করে সস্তায় অন্য দেশের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করিয়ে পয়সা তুলে নিয়ে গেছে। আর দেনার দায়ে ডুবেছে বাপেক্স। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাপেক্স যেখানে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকায় কূপ খনন কওে, সেখানে বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে কূপ খনন করতে ১৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা থেকে ঋণ নিয়ে কূপ খনন করা হয়। আর ওই ঋণের দায় যখনই বাপেক্সের ওপর এসে পড়ছে, তখনই উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অনুসন্ধান ব্যয়ও বাপেক্সেও কাঁধে পড়াতে সামগ্রিক ব্যয় বেশি হচ্ছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে যা যোগ হচ্ছে। গত বছর থেকে বাপেক্স কিছু কাজ করেছে। তার আগে ৪ বছর ধরেই বসে ছিল বাপেক্স। কিন্তু ওই সময়ও বাপেক্সের গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খনন করা হয়েছে। বাপেক্সকে বসিয়ে রেখেই কূপ খনন করা হয়েছে। আর যেসব কূপ খনন করা হয়েছে সেগুলোতেও খুব একটা উৎপাদন বাড়েনি। যাতে করে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা আপস্ট্রিম গ্যাসের ঘনমিটার প্রতি যে উৎপাদন ব্যয় দেখাচ্ছে, তাতে এদেশে সব থেকে বেশি দামে গ্যাস উত্তোলন করছে বাপেক্স। দেশের অন্য বিতরণ কোম্পানি যেখানে প্রতি ঘনমিটার এক টাকার অনেক নিচে গ্যাস উত্তোলন করছে, সেখানে বাপেক্সের ঘনমিটার প্রতি উৎপাদন ব্যয় তিন টাকারও বেশি। যা এদেশে কাজ করা আইওসি’র চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড ঘনমিটার প্রতি দশমিক ৭০৯৭ টাকা, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি দশমিক ২০২৮ টাকায় এবং আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি (আইওসি) ২ দশমিক ৫৫ টাকায় গ্যাস উত্তোলন করছে। সেখানে বাপেক্স ঘনমিটার প্রতি খরচ করছে ৩ দশমিক ০৪১৪ টাকা। অথচ দেশের কোনো কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় আইওসির চেয়ে বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাপেক্সের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে। গ্যাস কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল) দৈনিক ৭৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, বাপেক্স ১০৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফসিএল) ১২৪ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আইওসি এক হাজার ৭১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে।
এদিকে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্যাস উত্তোলনে বেশি খরচের ব্যাপারে কোনভাবেই এজন্য বাপেক্স দায়ি নয়। বরং দেশের গ্যাস খাতের স্বনির্ভরতার বদলে বাপেক্সের রিগ এবং জনবল বসিয়ে রাখা হয়েছে। বাপেক্স যে কিছু করতে পারে না, বাপেক্সকে দিয়ে কিছু হবে না তা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে বিদেশী কোম্পানি ওই সুযোগে স্থলভাগে কাজ করতে পারে। এমন পরিস্থিতি একটু একটু করে সৃষ্টি করা হচ্ছে। যা কোনভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। বাপেক্স পেট্রোবাংলারই একটি কোম্পানি। নিয়ম অনুযায়ী বাপেক্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে পেট্রোবাংলা। জ¦ালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার নির্দেশনার বাইরে গিয়ে বাপেক্সের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাপেক্স সরকার নির্ধারিত দর প্রতি ঘনমিটারে ৮৮ পয়সা পাওয়ার কথা না। কিন্তু সে তিন টাকার ওপরে ব্যয় করছে। কিভাবে এটি সমন্বয় হবে তার কোন ঠিক নেই। আর এভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধির বদলে বাপেক্সকে দেনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। তাতে গ্যাস খাতের মারাত্মক ক্ষতি হবে। যা এক সময় ভোক্তাদের ওপর বর্তাবে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ বাপেক্স পৃথক কোম্পানি। তার হিসেবও আলাদা।
এফএন/এমআর