সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা (পটুয়াখালী) থেকে॥
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম নব-গঠিত চর-বোরহান ইউনিয়নের দু’হাজার পরিবারের জন্য একজন মাঠকর্মী দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাও আবার উপজেলা সদর থেকে বিশাল নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় নব-গঠিত চরবোরহান ইউনিয়ানে। ইউনিয়নটির এক একটি ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যেতে নৌকা বা আকাবাকা মেঠো পথ হেটে যেতে হয় তাকে। বর্ষা মৌসুমে আবার হেটে যাওয়ার কোন উপায় থাকে না। উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে গড়ে প্রতি ৯শ” ৩৯দশমিক ৩৯জন দম্পতির জন্য একজন মাঠকর্মী কাগজে পত্রে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ৫টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ একটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীর ১৯টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে পরিবার পরিকল্পনায় তেমন সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। সেবা বঞ্চিত হওয়া সত্তেও আগ্রহের ঘাটতি নেই দম্পতিদের।
উপজেলার সর্ব দক্ষিনে বুঁড়াগৌরাঙ্গ নদীর ঠিকমাঝ খানে অবস্থিত নব-গঠিত চরবোরহান ইউনিয়ন। একই চরের দু’ নামে পরিচিত। পশ্চিমাংশ চরবোরহান, পূর্বাংশ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমোতাহার । ইউনিয়নটি উত্তর দক্ষিনে প্রায় ১৭ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য। ইউনিয়নটি এক সময় রনগোপালদী ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড ছিল। ওই ওয়ার্ডেও একজন পরিবার কল্যান সহকারী দিয়ে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। এ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম প্রায় দু’ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডের দু’হাজার পরিবারের জন্য ওই একজন মাঠকর্মী রয়েছে। ওই ইউনিয়নের মোঃ রত্তন ফকির মোঃ মুছা মৃধা ও মোঃ বাবুল সরদার অভিযোগ করে বলেন, পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী মোসাঃ আসমা বেগম নিয়মিত আসেনা। মাসে কিংবা দু’মাসে একবার দেখা মিলে পরিবার পরিকল্পনার লোকের। ফলে ওই চরের অধিকাংশ গর্ভবর্তীদের ঠিকমতো সেবা বা ওষুধ তেমন কিছু দেয় না। ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ গত দু’ বছরে দেখা মিলেছে এক কি দু’ বার। এ বিষয় জানতে চাইলে পরিবার কল্যানের সহকারী মোসাঃ আসমা বেগম এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোেনে বলেন, সব সময় চেয়ারম্যানের সাথে দেখা হবার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, ওই চরে ১হাজার ৪শতাধিক সক্ষম দম্পতি রয়েছে। প্রতি মাসে ১বার সিডুউল অনুসারে ওই চরে যাওয়া আসা হয়। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক কাজী মাহাবুব আলম বলেন, একজন গর্ভবর্তীকে গর্ভধারনের শুরু থেকে সন্তান প্রসাবের আগ পর্যন্ত ৪বার এবং সন্তান জম্মদানের পর আরও ৪বার তদারকি করা হয়। তবে মাঠকর্মী সংকট থাকায় অনেকে শতভাগ সেবা দিতে পারে না। তিনি আরও বলেন, পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে মানুষের মাঝে বেশ আগ্রহ আছে। আমরা তাদেরকে উদ্ধ¦দ্ধ করি। কাউন্সিল করি। দিন দিন তাদের আগ্রহ বাড়ছে। চরবোরহান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজির সরদার বলেন, পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীর মাঠে দেখা মিলে না। ১৭ কিঃ মিঃ দীর্ঘ ইউনিয়নটিতে অসংখ্যক ছোট বড় খাল রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্ন্য়ন হয়নি। পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি নির্মান করা একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট লোকসংখ্যা ১লাখ ৪১হাজার ২শ’৯৮জন। সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ২৭হাজার ১৪৩জন। সেবার বা পদ্ধতির আওতায় রয়েছে ২১হাজার ৩৬৪জন দম্পতি। সেবা বঞ্চিত রয়েছে ৫হাজার ৭শ’ ৭৯জন দম্পতি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে মোট ৭৪জন কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ থাকলেও রয়েছে ৫৫জন। পদ শূন্য রয়েছে ১৯টি। পদগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার ১টি, ফার্মাসিষ্ট ৩টি, পরিদর্শক ২টি, সহকারী পরিদর্শক ৫টি, নিরাপত্তা প্রহরী ২টি , আয়া ৩টি ও এমএলএসএস ১টি পদশূন্য রয়েছে। মাঠেমাত্র ২৮জন এফ ডব্লিউএ কাজ করায় গড়ে প্রতি একজন মাঠকর্মী ৯শ” ৩৯দশমিক ৩৯জন দম্পতিকে সেবার আওতায় পড়েছে। ওই অফিস সূত্রে আরও জানা যায় পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনকারী শতকরা ৭৯দশমিক শতাংশ বেড়েছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, কর্মী সংকটের মধ্যেও দম্পতিদের অধিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা রনগোপালদী ইউনিয়নের পরিবার কল্যান কেন্দ্র পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। আরও ৩টি ইউনিয়নের পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায়।