ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক মানুষকে। অগ্নিকান্ডের পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এক যুবকের পর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অ্যাপোলো ও বনানী ক্লিনিকে মারা গেছেন আরও দু’জন। গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আবদুল আহাদ সাত জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলেন-পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), মামুন (৩৬), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মনির (৫০) ও মাকসুদুর (৩৬)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ২২ তলা ওই ভবনে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঢাকা মহানগর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী কমিশনার সাইদুল ইসলাম বিকালে বলেন, এ পর্যন্ত আমরা সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজনের মৃতদেহ আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। আরও ২৩ জনকে আহত বা অসুস্থ অবস্থায় সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার জানান, সেখানে যে তিনজনের মৃতদেহ রয়েছে, তাদের সবাই পুরুষ, তাদের একজনের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, বাকিদের অন্য ইনজুরি ছিল। নিহতদের একজনের নাম মনির। আরও একজনের মৃতদেহ গুলশানের অ্যাপলো হাসপাতালে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাটারা থানার ওসি কামরুজ্জামান। তিনি এর বেশি তথ্য দিতে পারেননি।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুননবী জানান, অন্তত ৩০ জনকে তার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে নিরাস চন্দ্র নামের এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। সে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতাল আনা হয়। যাদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ কেউ নেই। অধিকাংশই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অথবা লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে জানান পরিচালক। এদিকে এফআর টাওয়ার থেকে উদ্ধার করে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের মধ্যে একজনকে বার্ন ইউনিটে মৃত ঘোষণা করা হয়।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সর্দার জানান, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভনিং এমবিএ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ছেলে ফারুকের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডটি পাওয়া গেছে তার পকেটে। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান।
এ ছাড়া শ্রীলংকান নাগরিক সিরি ইন্দ্রিকা (৪৬), আবু হোসেন (৩৫), সাব্বির আলী মৃধা (২৫) ও রেজোয়ান আহমেদ (৩৭) শরীরে জখম ও আঘাত নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন অফিসে কাজ করতেন। বিকালে সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এফ আর টাওয়ার থেকে আরও একজনের পোড়া লাশ নামিয়ে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
আএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান জানান, ওই ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আহত পাঁচজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান বলেন, ২২ তলা ভবনের সব ফ্লোরেই আমাদের কর্মীরা যাচ্ছেন, কেউ আটকা পড়ে থাকলে বা হতাহত থাকলে তাদের উদ্ধার করার জন্য তল্লাশি চালাচ্ছেন।
এফএন/কেএস