সাগরকন্যা ডেস্ক॥
ঢাকা, গাজীপুর ও কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক রাতে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় র্যাবের গুলিতে একজন, গাজীপুরের টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে একজন এবং কক্সবাজারে বিজিবি ও র্যাবের গুলিতে ৪জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে তথা বুধবার ভোররাতে এসব ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ ও পেকুয়ায় বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয়েছে। বুধবার ভোর রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী এবং পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মগনামা ঘাটে গোলাগুলির এসব ঘটনা ঘটে বিজিবি ও র্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য। এর মধ্যে হোয়াইক্যং এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের বিজিবির গুলিতে নিহত দুজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা এবং পেকুয়ায় র্যাবের গুলিতে নিহত দুজনকে সন্দেহভাজন জলদস্যু বলা হলেও তাদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি দুই বাহিনীর কেউ। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জমাদার জানান, মিয়ানমার থেকে ‘ইয়াবার একটি বড় চালান’ দেশে আসার খবরে বুধবার ভোর রাতে তাদের একটি দল হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকায় অভিযানে যায়। এক পর্যায়ে মিয়ানমারের দিক থেকে কাঁধে বস্তা নিয়ে দুই লোককে নাফ নদী পার হতে দেখে তাকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু তারা না থেমে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ধাওয়া দিলে তারা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। বিজিবির সদস্যরাও তখন পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি থামার পর ঘটনাস্থলে দুইজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে এব লাখ ৯০ হাজার ইয়াবা এবং দুটি কিরিচ উদ্ধার করা হয় বলে মেজর শরীফুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, নিহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর। তারা দুজনই রোহিঙ্গা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের লাশ টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান মেজর শরীফুল।
এদিকে ভোর রাতে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মগনামা ঘাটে গোলাগুলির অপর ঘটনাটি ঘটে বলে র্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসানের ভাষ্য। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রধারী কিছু লোক’ সাগরে ট্রলার লুটের উদ্দেশে জড়ো হয়েছে খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল পেকুয়ার মগনামা ঘাটে অভিযানে যায়। তারা সেখানে পৌঁছালে অস্ত্রধারী লোকজন গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় র্যাব সদস্যরাও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে গোলাগুলি থামার পর দুইজনকে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গুলিবিদ্ধ দুজনকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মেহেদী। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে আটটি বন্দুক ও ২৬টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের লাশ পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের নাম ও পরিচয় জানাতে না পারলেও তাদের একজনের বয়স ত্রিশোর্ধ এবং অন্যজন চল্লিশোর্ধ বলে র্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা।
ঢাকা: রাজধানীর ভাসানটেকের মাটিকাটা এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে র্যাবের গুলিতে এক ডজন মামলার এক পলাতক আসামি নিহত হয়েছেন। র্যাব বলছে, নিহত শফিকুল ইসলাম শফিক (২৮) নরসিংদী পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’। তার বিরুদ্ধে হত্যার তিনটি, অস্ত্র আইনে চারটিসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক ডজন মামলা রয়েছে থানায়। র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যমে শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শফিকের অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে মাটিকাটা এলাকার একটি ভবনে অভিযান চালানো হয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে শফিক ও তার সহযোগীরা গুলি ছোড়ে। তখন র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে শফিক গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ শফিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ওই বাড়ি থেকে প্রদীপ চন্দ্র (৩৫) ও ফারুক হোসেন (৩২) নামে শফিকের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনারস্থল থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের একজন সদস্যও এই অভিযানে আহত হয়েছেন বলে মুফতি মাহমুদ খান জানান।
গাজীপুর: গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিনতাই মামলায় এক আসামি গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের অভিযানের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরা বাঁশপট্টি এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) মো. শরিফুর রহমানের ভাষ্য। নিহত মো. কাউসার (২৮) টঙ্গীর এরশাদ নগরের ৬ নম্বর ব্লকের মিন্টু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় ছিনতাই ও ডাকাতির পাঁচটি মামলার তথ্য দিয়েছে পুলিশ। উপ কমিশনার শরিফ বলেন, এরাশাদনগর এলাকার ‘কুখ্যাত ছিনতাইকারী’ কাউসারকে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একটি দল তাকে নিয়ে গাজীপুরা বাঁশপট্টি এলাকায় অভিযানে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর কাউসারকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তার সহযোগীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে কাউসারের গায়ে গুলি লাগলে অন্যরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ কাউসারকে প্রথমে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসাপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয় বলে উপকমিশনার শরিফ জানান। তিনি বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই জহুরুল ইসলাম এবং কনস্টেবল মো. বদরুলও এ অভিযানে আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসাপাতালের রেজিস্ট্রারের বরাত দিয়ে জরুরি বিভাগের নার্স মো. তারিকুল ইসলাম জানান, রাত ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ কাউসারকে সেখানে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মাসুদ রানা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, টঙ্গী থেকে কাউসারকে ভোরের দিকে হাসপাতালে আনা হয়। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।