আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
জমে উঠেছে আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রচার প্রচারনায় মুখরিত শহর থেকে প্রান্তিক গ্রামাঞ্চল। প্রার্থী, কর্মী সমর্থন ও স্বজনদের মাঝে নেই কোন বিশ্রাম। সবাই ব্যাস্ত ভোট প্রার্থনায়। চায়ের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরায় সর্বত্রই চলছে আলোচনা কে হচ্ছেন আমতলী উপজেলা পরিষদের কর্নধার? আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, না আওয়ামী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামীলীগ তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন। আওয়ামীলীগ তিন ধারায় বিভক্ত হওয়ায় হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, লিপলেট বিতরণ ও পথসভা করে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিন প্রার্থী প্রচার প্রচারনা চালালেও অভিযোগ রয়েছে আচরন বিধি লঙ্ঘনের। তবে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সস্থি ফিরে এসেছে সুষ্ঠু ভোটদানের।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ ফেব্রুয়ারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছেন। ওই তফসিল অনুসারে আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৩১ মার্চ। প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, লিপলেট বিতরন ও পথসভা করে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মূল প্রচার প্রচারনায় আছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ জিএম দেলওয়ার হোসেন, আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য গোলাম ছরোয়ার ফোরকান, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু। এদিকে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী সামসুল হক জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা থেকে সরে দাড়িয়েছেন। গাজী সামসুল হক সরে দাড়ানোর ফলে ভোট যুদ্ধে অবর্তিন হয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জিএম দেলওয়ার হোসেন ও আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান (আনারস) ও সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু (ঘোড়া)। তিন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান। আমতলী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৩৪। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমতলী পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ মজিবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন আহম্মেদ শানু প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনা, তামান্না আফরোজ মনি ও মাহমুদা পারভীন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরাও চালাচ্ছেন তীব্র প্রচার ও প্রচারনা।
আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ২০ জনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ওই ২০ জনের মধ্যে ৯ জনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান, ৬ জনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জিএম দেলওয়ার হোসেন ও ৫ জনে আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে ভোট দিবেন বলে মত প্রকাশ করেছেন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হয়ে সাত চেয়ারম্যান এখন দলের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে আওয়ামীলীগের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। যে সাত চেয়ারম্যান দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে দলের ক্ষতি করেছে তাদের শাস্তি দাবী করছি।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ জিএম দেলওয়ার হোসেন নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নৌকার ভরাডুবির জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মেয়র মতিয়ার রহমান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. নুরুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ হাওলাদার, বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার, আখতারুজ্জামান বাদল খান, শহীদুল ইসলাম মৃধা, মোতাহার উদ্দিন মৃধা ও একেএম নুরুল হক তালুকদার নৌকার সমর্থন না জানিয়ে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে সমর্থন দিয়ে দলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। এরাতো আমাকে হারানোর জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবন্ধ হয়নি এরা প্রধানমন্ত্রীর নৌকা হারানোর জন্য ঐক্যবন্ধ হয়েছে। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারনে এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই। তিনি আরো বলেন, ওরা প্রধানমন্ত্রীর নৌকার সাথে বেইমানী করেছে তারপরও আশা করি নৌকা বিজয়ী হবেই।
আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু অন্য প্রার্থী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকার কথা ব্যক্ত করে বলেন, আমি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে উপজেলাকে সুন্দরভাবে সাজাবো।
আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান শতভাগ বিজয়ের আশা ব্যক্ত করে বলেন, জনগনই আমার মূল উৎস। জনগনের ভোটে আমি বিজয়ী হয়ে আমতলী উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলায় রুপান্তিত করবো, সন্ত্রাস, মাদক, অবৈধ টোল নির্মূল করে দিব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।