কলাপাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা বাহিরে এক-ভেতরে আরেক!

প্রথম পাতা » লিড নিউজ » কলাপাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা বাহিরে এক-ভেতরে আরেক!
রবিবার ● ২৪ মার্চ ২০১৯


গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন (উপরে), চতুর্খ শ্রেণির দুইজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে ওই বিদ্যালয়ের ক্লাস।

মেজবাহউদ্দিন মাননু, সাগরকন্যা রিপোর্ট॥
দেশবরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী হায়দার হোসেনের গানের যেন একটি লাইনের অংশ ‘কী দেখার, কী দেখছি’। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন এ গানের লাইনের প্রশ্নবিদ্ধ অংশ হয়ে আছে। স্কুলটি শুধু ভবন সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালে কোটি টাকারও বেশি ব্যয় একটি আধুনিক ভবন নির্মিত হলেও শিক্ষার্থী সঙ্কট কাটছে না কোন কিছুতেই। দূর থেকে দেখতে ভালই লাগে। ভেতরে গিয়ে হতাশারও হতাশাজনক চিত্র। শনিবার দুপুর, ২৩ মার্চ। দোতলার একটি কক্ষে শিশু আব্দুল্লাহ আল জারিফ ও মো. সিয়ামকে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক লাইজুন্নাহার। চতুর্থ শ্রেনির ক্লাশ এটি। কাগজপত্রে এই ক্লাশে চার শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ চারজনও নেই। এক নম্বর রোল সাইম অন্য স্কুলে চলে গেছে। অপর একজন মেহেদীকে তার মা অন্যত্র নিয়ে গেছেন। এখন চতুর্থ শ্রেণির ভরসা এ দুইজন। পঞ্চম শ্রেণির ক্লাশ চলছিল অপর একটি কক্ষে। মাইনুল  (রোল নং ৩), নেয়ামুল (রোল নং ৬) ও কন্যা শিশু মীম (রোল নং ১) উপস্থিত রয়েছে। এ তিনজনকে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক মাসুমা বেগম। পঞ্চমে কাগজপত্রে আট শিক্ষার্থী আছে বলে জানালেন শিক্ষকরা। তৃতীয় শ্রেণিতে কেউ নেই। কাগজপত্রে  চার জন রয়েছে। স্থানীয়সুত্রে জানা গেল, এরা পাশের মাদ্রাসায় চলে গেছে। দ্বিতীয় শিফটের ক্লাশ তাই দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণির চিত্র দেখা গেলনা। শিক্ষকদের খাতাপত্রের তথ্যে প্রথম শ্রেণিতে ১৫ ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে আটজন শিশু রয়েছে। তবে তিন শিক্ষকের তিনজনই উপস্থিত রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান এ মাসেই যোগদান করেছেন বলে জানা গেল। তিনি এই বেহালচিত্রের কারণে যোগদান করেই স্কুল ক্লাস্টার এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। খাতাপত্রে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৯ জন থাকার কথা। কিন্তু নেই অর্ধেক। প্রায় ৯৮ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ৯৭ বছরের স্কুলটি এখন আছে শুধু ভবন সর্বস্ব। স্থানীয়দের অভিযোগ সদ্য বদলী হওয়া প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান এক যুগের বেশি চাকরিকালে কর্মস্থলে না থেকে এমন বেহাল দশা করেছেন স্কুলটির। তিনি বলেছেন ওই ক্যাচমেন্টে শিশু কম। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মানতে নারাজ। অভিভাবকরা জানান, লেখাপড়া হইতোনা তাই তাঁরা সন্তানদের প্রায় দেড় মাইল দুরের তেগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। তবে স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসায় বহু শিশু ভর্তি হয়েছে। সবচেয়ে মজার এবং আশ্চর্যের বিষয় এ স্কুলটি পরিদর্শন করার পরও কেন শিক্ষা অফিস কোন কার্যকর ব্যবস্থা আগে নেয়নি। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কী হাল-হকিকত তা স্পষ্ট করে শিক্ষকরা জানাতে পারেননি। সেখানকার আব্দুস সোবাহান গাজী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তিনি জানান, এই ক্যাচমেন্টের শিশু সংখ্যা কম। তাঁরা অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। স্থানীয়রা জানালেন, এ বেহালদশা উত্তরণের পথ এখন তাদেরও জানা নেই। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল আহম্মেদ জানান, বিষয়টি জেনে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। সাধারণ মানুষ জানান, সরকার শিক্ষকদের জাতীয়করনের পাশাপাশি স্বস্তিদায়ক ভেতন-ভাতার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু জনগণ এর সুফল পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:২৯ ● ৬৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ