ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের দেড় শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পর কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। ওসব উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি শূন্যেও কোটায় রয়ে গেছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ১ হাজার ৭৪০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার মধ্যে ১৫৫টি প্রকল্প গ্রহণের পর কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। ওই সংখ্যা মোট প্রকল্পের ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার মধ্যে অনেক প্রকল্প আগের বছরের ধারাবাহিকতায় চলে এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ২৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে চলমান রাখা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রকল্পে বরাদ্দ থাকলেও কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্পের দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্রে সাড়া না পাওয়া, প্রকল্পে ঋণ না পাওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, মামলাজনিত সমস্যা, প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনে বিলম্ব, দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে বিলম্ব, নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি শূন্য পাওয়া গেছে। শুধু ২০১৭-১৮ সালে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এরকম ৯০টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। মূলত প্রকল্প গ্রহণের সময় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করে এবং ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে প্রকল্প প্রস্তাবনা এডিপি বাস্তবায়নে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ১ হাজার ৭৪০ প্রকল্পের মধ্যে ৭৫ প্রকল্পে ২৫ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাকে হতাশাজনক বলা হয়েছে। আর ৮০ প্রকল্পে ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। মোট ২৩৭ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি এবং ১৯৩টি প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। তবে ১৫৯ প্রকল্পের আর্থিক ও ১২৩টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯২টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত থাকলেও সমাপ্ত হয়েছে ১৮৮টি প্রকল্প। তাছাড়া ১০৬টি প্রকল্পের কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে মার্কেট এনালাইসিস বা বাজার পর্যালোচনা না করেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ফলে প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। অনেক সময় কিছুদিন চলার পর প্রকল্প বাতিল করারও প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনা না করেও অনেক সময় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ফলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা গ্রহণ করতে হয়। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি এবং একজন প্রকল্প পরিচালককে একাধিক প্রকল্পে দায়িত্বভার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বার বার মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ নিবিড় মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। প্রকল্প সমাপ্তির ৩ মাসের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন আইএমইডিতে প্রেরণের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয় না।
এদিকে প্রককল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে প্রকল্পের সুফল টেকসই করার লক্ষ্যে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রকল্প দলিলে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে আইএমইডি। তাছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিবেচনায় এনে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রকল্প গ্রহণ করারও সুপরিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন থেকে প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক ভাবে আইএমইডিতে ৩ মাসের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে। তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প তদারকি বাড়াতে বিভাগীয় শহরে আইএমইডির অফিস করা হবে। বাস্তবায়ন তদারকি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী আইএমইডিকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এফএন/এমআর