ফেইসবুকে ভাইরাল! চরফ্যাশনে কিশোর নির্যাতনের ৬৩ দিন পর থানায় মামলা
প্রথম পাতা »
ভোলা »
ফেইসবুকে ভাইরাল! চরফ্যাশনে কিশোর নির্যাতনের ৬৩ দিন পর থানায় মামলা
সোমবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৯
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন থেকে॥
চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ গ্রামে মুরগীর চুরির অপবাদে এক কিশোরকে অমানবিক নির্যাতনের করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম (ফেইসবুকে) ভাইরাল হওয়ায় ঘটনার ৬৩দিন পর নির্যাতনকারী ইউপি সদস্যসহ ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার শশীভূষণ থানার অফিসার ইনাচার্জ(ওসি) মনিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার ও সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ইং তারিখ গভীর রাতে কিশোর রুবেলের পাশ্ববর্তী কবির তালুকদার এর ১টি মুরগীর চুরির অপবাদ আনা হয়। ঘটনাটি হাজারীগঞ্জ ইউপি‘র সদস্য আমজাদ হোসেনকে জানায়। আমজাদ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রুবেলকে সন্দেহজনক মনে করে মেঘনা নদীর পাড় থেকে কমান্ডে ষ্টাইলে ধরে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাত-পায়ে লাঠি বেঁধে, মধ্য যুগীয় কায়দায় প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে এলোপাথারী মারধর শুরু করে। তার ডাক চিৎকারে গ্রামের আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে মা বিলকিছ উদ্ধার করতে ছুটে গেলে মেম্বার আমজাদ তাকে ছাড়িয়ে নিতে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা তাৎক্ষনিক দিতে না পাড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে পায়। তাৎক্ষণিক অসহায় বিধায় মা কয়েক স্থান থেকে ধার-করর্জ করে ১০ হাজার টাকা মেম্বারকে দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয়। তাকে চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে দেয়নি মেম্বার ও তার লোকজন। ৪দিন পর চরফ্যাশন হাসপাতালের ডাক্তার নুর মোহাম্মদ তালুকদারের কাছে চিকিৎসা নিয়েছে।
বিষয়টি সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে ভিডিও চিত্র রবিবার একাধিক ব্যক্তি পোস্ট করেন। মিজানুর রহমান সোহেলের আইডি থেকে পোষ্ট করা হলে একাধিক কমান্ড করা হয়। ইকবার হোসেন বলেছেন মেম্বারগন চোর। জসিম উদ্দিন বলেছেন, এই মেম্বারের বিচার হওয়া জরুরী। এ ফেইসবুকে ভাইরাল হলে প্রশাসনের দৌড়ঁঝাপ আরো বেড়ে যায়। ইউপি সদস্য আমজদাসহ আসামীরা ফলাতক রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়।
সোমবার বিষয় আমলে নিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী সরেজমিন গিয়ে ভিডিও ও তথ্য চিত্র গ্রহণ করেন। নির্যাতিতের মা বিলকিছ কে কেন আইনের আশ্রয় নেয়া হয়নি এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমজাদ মেম্বার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে বিভিন্ন হুমকী ধামকী দিয়ে এলাকায় আটকিয়ে রাখা হয়েছে। দুঃখ কষ্ট নিয়ে নির্যাতিত কিশোর রুবেলের মা শশীভূষণ থানায় গিয়ে ওসি’কে না পেয়ে উপ-পুলিশ পরিদর্শক(এস.আই) শ্রী পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই উপ-পুলিশ পরিদর্শক বিচার পাবেন এমন আশ্বাস দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এতে ওই ক্ষমতাধর মেম্বর আমজাদ হোসেন নির্যাতিত পরিবারকে হুমকি ধামকির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ভিডিও চিত্র শশীভূষণ থানার ওসি মনিরুল ইসলামের কাছে আসলে ঘটনার ৬৩দিন পরে ইউপি সদস্য আমজাদসহ ৬জনকে আসামী করে শশীভূষণ থানায় মামলা রুজু করা হয়। ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও চিত্র আমার কাছে আছে। নির্যাতনে চিত্র আসহনীয়। আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় হাজারীঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার জনান, ঘটনার দিন কিশোরের মা আমার কাছে অভিযোগ করলে এই ঘটনা বিচার করার একতিয়ার আমার নেই বলে আমি থানায় পাঠিয়ে দেই। তবে থানায় তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে বিষয়টি নিয়ে এতদুর গড়িয়েছে। অভিযুক্ত ইউপির সদস্য আমজাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভাব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর ২০১৮ বেলা সাড়ে ১১টায় এলাকার হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রকাশ্যে রুভেল (১৪) এর নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। আহত কিশোর হাজারীগঞ্জ ৯নং ওয়ার্ড আঃ মালেক এর ছেলে। ১৮ জানুয়ারী /১৯ইং তারিখে শশীভূষণ থানায় মামলা দয়ের করেছে। যার মামলা নং ১৩/২০১৯ইং।
এনবি/এনইউবি
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০০:২৯ ●
৭০২ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)