দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জন করলেন যারা

প্রথম পাতা » রাজনীতি » দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জন করলেন যারা
সোমবার ● ১৮ মার্চ ২০১৯


ফাইল ছবি
সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
দ্বিতীয় ধাপে সোমবার অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জন করেছেন বেশ কিছু প্রার্থী। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে কেন্দ্র দখল ও ভোট করচুপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ তিন জন, চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর ও কাউখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র পাঁচ চেয়ারম্যান ও সাত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

মৌলভীবাজার: রাজনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান আছকির খান ভোট বর্জন করেছেন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সোমবার দুপুরের দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান খানের (কাপ পিরিস) বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্রে বল প্রয়োগ, ভোটকেন্দ্র দখল, পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা, জালভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন তিনি। রাজনগরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে বল প্রয়োগ করা হয়েছে, জালভোট দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা ভোট বর্জন করেছি। রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিনি (আছকির খান) নির্বাচন বর্জন করেছেন।

খাগড়াছড়ি: মহালছড়িতে কেন্দ্র দখল ও ভোট করচুপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ তিন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্যাজাই মারমা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবির এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কাকলী খীসা। পার্বত্য চট্রগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সংস্কার গ্রুপ সমর্থিত প্রার্থী বিমল কান্তি চাকমা ওরফে মুর্তবাবুর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে তারা এসব অভিযোগ এনে সোমবার দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আবুল কাশেমের নেতাকর্মীরা দিঘীনালা উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। পরে পুলিশ ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে তা ভন্ডুল করে দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এছাড়াও লক্ষিছড়ি উপজেলার একটি কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুই এজেন্টকে অপহরণ করে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের (প্রসিত গ্রুফ)সদস্যরা। পরে স্থানীয় দেন-দরবারের শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রিটানিং কর্মকর্তা চাহেল তাস্তুরি জানান, বিক্ষিপ্ত ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি: বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর ও কাউখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র পাঁচ চেয়ারম্যান ও সাত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। তারা নির্বাচন স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে রাঙামাটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন। রাতে ভোটগ্রহণ ও দিনে বেলায় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে বাঘাইছড়িতে ভোট শুরুর একঘণ্টা পরেই বর্জনের ঘোষণা দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা এবং তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ উপজেলায় জনসংহতি সমিতির দু’টি অংশের প্রভাবশালী দুই নেতা বড়ঋষি চাকমা ও সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা মুখোমুখি হয়েছিলেন এবার চেয়ারম্যান পদে। ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবারের প্রার্থী বড় ঋষি চাকমা অভিযোগ করেছেন, গত রবিবার রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই আমার সমর্থক ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ও সশস্ত্র কর্মী এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভোট সন্ত্রাস করলেও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলাম। আমার সঙ্গে আরও তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীও নির্বাচন বর্জন করছেন। নানিয়ারচরের চেয়ারম্যান প্রার্থী রূপম দেওয়ানের অভিযোগ, রাতেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে এবং দিনের বেলায় আমরা ও আমাদের ভোটাররা কেন্দ্রেই যেতে পারছি না। সঙ্গত কারণেই নির্বাচনে থাকার কোনও মানে নেই। তাই আমিসহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেলাম।

তিনি জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী জোন্তিনা চাকমা ও পঞ্চানন চাকমাও নির্বাচন বর্জন করেছেন। এদিকে কাউখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এই উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের শামসুদ্দৌহা ও জনসংহতি সমিতির প্রার্থীর অর্জুন মনি চাকমার মধ্যে অর্জুন মনি চাকমা ভোট বর্জন করেন।

তিনি বলেন, ব্যাপক ভোট কারচুপি ও ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসউদ পারভেজ মজুমদার বলেছেন, তিন চেয়ারম্যান ও চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত করতে আমার কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আমি রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি। রাঙামাটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শফি কামাল বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন।

প্রসঙ্গত, বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুই আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি বড়ঋষি চাকমা ও জনসংহতি সমিতি(এমএন লারমা) সমর্থিত প্রার্থী সুদর্শন চাকমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নানিয়ারচরে ৫ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে বর্জনকারী তিন চেয়ারম্যাপন প্রার্থী বাদে রূপম দেওয়ান এবং বর্তমান চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা দুজনই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএললারমা) প্রার্থী হিসেবে প্রচার ও দাবি করে আসছিলেন। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জাতীয় দলগুলোর কোনও প্রার্থী নেই।

চট্টগ্রাম: ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে রাঙ্গুনিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আকতার হোসেন (মোমবাতি) ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে ভোট বর্জনের সময় মো. আকতার হোসেন বলেন, সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এরপর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া শুরু হয়। ভোট কারচুপি ও ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। রাঙ্গুনিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. ফয়জুল ইসলাম (উড়োজাহাজ), মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (তালা), মো. আকতার হোসেন (মোমবাতি) ও মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন তালুকদার (টিয়া পাখি) নির্বাচন করছেন। ইতোমধ্যে উড়োজাহাজ প্রতীকের মো. ফয়জুল ইসলাম ও টিয়া পাখি প্রতীকের মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন তালুকদার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে (তালা) সমর্থন দিয়েছেন।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩২:০৪ ● ৪০০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ