ঢাকা সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ‘ধিক্কার জানিয়ে’ অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। সোমবার বিকেল ৫ টায় কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র জোটের ভিপি পদের প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান। এসময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ডাকসুর জিএস প্রার্থী রাশেদ খান, ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর উপস্থিত ছিলেন।
অরণি সেমন্তি খান বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। আমরা পাঁচঘণ্টা ধরে অবস্থান করছি। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কারচুপির প্রমাণ জমা দিয়েছে। ভিসির আমাদের সামনে এসে কথা বলার সৎ সাহসটুকু নেই। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অফিস টাইম হিসেবে আমরা ধিক্কার জানিয়ে আজকের (গতকাল সোমবার) কর্মসূচি স্থগিত করছি। পাঁচ প্যানেল সম্মিলিতভাবে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান রাশেদ খান। এর আগে ডাকসু পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের (ভিসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এর আগে বেলা ১১টার পর থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ ভোট বর্জনকারী প্যানেলগুলো। তবে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ছিল শান্ত। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা যথানিয়মে চলে। গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন বয়কটকারী বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীসহ বেশ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন। প্রায় ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া অন্য ২৩টি পদে জয় পায় ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা। নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যসব প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। এরপরই নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচটি প্যানেলের প্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
উপাচার্যকে নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ দিলেন অনশনকারীরা:
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা নির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণসহ অভিযোগপত্র জমা দেন। উপাচার্য তাদের অভিযোগের প্রমাণগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে ছয় অনশনকারী শিক্ষার্থী সকাল সোয়া ১০টায় তার কার্যালয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর উপাচার্য তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনশনকারী ছয় শিক্ষার্থী হলেন, রাফিয়া তামান্না, আল মাহমুদ তাহা, সোহেল মাহমুদ অনন্ত, মাইন উদ্দিন আহমেদ, তাওহীদ তানজিম, রবিউল ইসলাম। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না বলেন, আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগের প্রমাণ জমা দিয়েছি। তিনি আমাদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। কিন্তু তার আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ, তিনি আমাদের বারবার বিগত বছরের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, সেগুলোতে অনেক রক্তারক্তি হয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। আমরা তাকে রোকেয়া হলের ঘটনায় যে অজ্ঞাত মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। তিনি শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে চাই, ২৫ হাজার ভোটার যে ভোট দিয়েছেন, তার স্বাক্ষর করা তালিকা চাই। আর ভোট গণনা করতে কেন এত সময় লাগলো তার কৈফিয়ত চাই।
এফএন/কেএস