
চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চিকিৎসক, জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। প্রসূতি বিভাগ,অপারেশন থিয়েটারসহ যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুমসহ নানা সংকটপন্ন অবস্থায়। দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে এক্স-রে, আল্ট্রাসুনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়েছে।
আর প্যাথলজি বিভাগে মাত্র একজন টেকনোলজিষ্ট দিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কাংখিত সেবা না পাওয়া ও অপরিছন্ন পরিবেশে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা।
সুত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে নির্মিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চরফ্যাশন পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন, বিচ্ছিন্নবেশ কয়েকটি দ্বীপসহ মনপুরা উপজেলার (একাংশ) প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় নির্ভতার প্রতীক।এ হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪০০-৫০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫গুন বেশী বর্তমান হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে।
ডাক্তারের প্রায় ৪০পদ রয়েছে। কাগজে-কলমে কর্মরত রয়েছেন নারী পুরুষসহ মাত্র ৭ জন। রোগীদের কথা বিবেচনা করে ২০১৮ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৫০শয্যা থেকে ১০০শয্যায় উন্নীত হলেও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। জনবলের অভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত শয্যার উন্নীত হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুযোগ-সুবিধা ও জনবল সংকটের সমাধা আজও হয়নি। হাসপাতালে সমস্যাদি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় একাদিক বার আবেদন করা হয়েছে কিন্তু তার কোন সুরাহ মিলেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুভন কুমার বসাক বলেন, গড়ে প্রায় দু’শ থেকে আড়াই‘শ রোগী ভর্তি থাকেন। প্রতি ১০জন রোগীর জন্য ১জন নার্স থাকার কথা। কিন্তুদেখে গেছে, ২০০রোগীর জন্য সিপটে আছে মাত্র ৩/৪জন নার্স। ডাক্তার ও নার্সসহ বহু জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।
হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, চক্ষু, শিশুসহ কোনো কনসালট্যান্ট এখানে নেই বলইে। ৪০ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে মাত্র সাতজন। তার মধ্যে ৩জনপুরুষ ৪জন নারী তার মধ্যে ২জন আছে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।৩৫জন নার্সের মধ্যে আছে মাত্র ১৮জন। স্বল্প জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হয় না। এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালে পরীক্ষার কোন তেমন কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় এই হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার। ফলে রোগীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ডাক্তারেরা পরীক্ষা দিলে তাদের কমিশন হিসেব মাতে পৌছে যায় তাদের পকেটে। দূর-দূরান্ত থেকে সেবার জন্য এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে ৫০০-৬০০টাকা ভিজিটে প্রাইভেট ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অথবা জেলা শহরে ছুটে যেতে হয় তাদের।
প্রতিদিন সকাল ১০টায় হাসপাতালে ডাক্তারগন আসেন ১টা থেকে ২টার বাজতে না বাজতে হাসপাতাল ছেড়ে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো বসে যান। সরেজমিন হাসপাতালে গেলে এই প্রতিনিধি ১টা বা ২টা বাজলে হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে উপস্থিত হন। দেখা গেছে সিরিয়াল ধরে ডাক্তারগন রোগী না থেকে সবাই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। উপস্থিত হাসপাতলের টিএসও ডাক্তার সুভন কুমার বসাক সবাই চলে যাওয়ার কথা শিকার করে বলেন,আমি তো আছি।
আসলামপুর ইউনিয়নের আবুগঞ্জ এলাকার মো. আলী বলেন, হাসপাতালের অনিয়মের ফলে রোগীগন ডায়গনষ্টিক সেন্ট উপর নির্রশীল। প্রতিদিন আন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন ডাক্তার। তবে শূন্য পদগুলো পূরণ হলে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, ঘন্টার পর ঘন্টা তো দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে। প্যাথলজিক্যাল বিভাগের টেকনিশিয়ান মনিরুল ইসলাম ছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আর কোন লোকই নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজস্ব প্যাথলজিক্যাল বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসা ৯০ শতাংশ রোগীকে কমিশন বাণিজ্যের জন্য বাইরের পছন্দের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কারণ রোগী জানেন না হাসপাতালে সল্প মূল্যে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করানো হয়। ফলে সরকার রাজস্ব প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতালের জনৈক স্টাফ নাম প্রকাশ সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতারে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ হয়ে তা কেউ জানে না । এমনকি ওষাধ বরাদ্দের বিষয়টি গোপন থাকে। গত আওয়ামীলীগ সররকারের আমলে ব্যপক অনিয়ম ও দূর্নীতি হয়েছে। বিছনাপত্র ওয়াস বাবৎ ও খাবার টেন্ডারে। খাবারও নিন্ম মানের অভিযোগ রয়েছে।কেউ মুখখোলতে পারেনি। টিএইচও সুভন কুমার বসাকই অনিয়ন ও দূর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত বলে দাবী করা হয়েছে।
মডিকেল টেকনোলজিষ্ট মনিরুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রোগীর ২০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাঝে-মধ্যে ২৪ঘন্টাই ডিউটি করতে হয়।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুভন কুমার বসাক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল বাড়ানো হয়নি। বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। জনবল সংকটে আমরা আছি। ডাক্তার ও নার্স উভয় সংকটে রয়েছে। দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এএইচ/এমআর