আমতলীতে মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগ, আহত-২০

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগ, আহত-২০
সোমবার ● ১৭ মার্চ ২০২৫


আমতলীতে মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগ, আহত-২০

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ চলাকালে হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এমন অভিযোগ করেছেন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় রবিবার রাত সোয়া ১২ টার দিকে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে তিনটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ দুইদিন ব্যাপী ওরশ উৎযাপন করে আসছেন। ২৮তম ওরশ রবিবার শুরু হয়। ওইদিন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক এসে মাজার পুজা ও গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ হয়। এক পর্যায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থকরা লাঠি সোটা নিয়ে মাজারে হামলা ও ভাংচুর করে এবং আগুন দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে আসেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অপর দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে মাজারের দুইটি বৈঠকখানা ও মাজারের মধ্যে সামিয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭)।  আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।  সোমবার বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জহুরুল ইসলাম হাওলাদার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন  বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে টুপি পরিহিত শতাধিক তাদের সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে মাজার হামলা- ভাংচুর করে ও আগুন দেয়। এ সময় ওরশে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তবৃন্দ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলতে থাকে। মানুষ দিক বেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।
ইসমাইল শাহ মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন,  মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি সোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা পয়সা লুটপাট করেছে।  আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, এ মাজারটি ভন্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গানবাজনা ও মাদক সেবন ও নারীদের অশ্লীল কাজের আসর বসে। যা সম্পুর্ণ ইসলাম বিরোধী। আমরা মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি তা না শুনে তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দেরা আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এই ভন্ড মাজারের খাদেম বাবুল উকিল ও তার দোসরদের শাস্তি দাবী করছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আমতলী ফায়ার ষ্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২ টা ৩৫ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুণে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুইটি ঘর পুড়ে গেছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জহুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন,  ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ওইস্থানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৪:০৯ ● ৩৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ