বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সামনে গ্রামবাসিদের বিক্ষোভ

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সামনে গ্রামবাসিদের বিক্ষোভ
শুক্রবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সামনে গ্রামবাসিদের বিক্ষোভ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের কারণে খনি সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত ১২ গ্রামের গ্রামবাসী তাদের ক্ষতিপূরণের ৬ দফা দাবিতে খনির প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ গ্রামের গ্রামবাসী খনির প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করায় এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন খনির ভেতরে অবস্থানরত চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিসিএমসিএল’র কর্মকর্তা ও কর্মচারিরাসহ পরিবারের লোকজন।
৬ফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ভূগর্ভে বিস্ফোরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ীর ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগস্ত এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত করা, এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী খনিতে চাকরি দেয়া, ক্ষতিগস্ত সকল এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের জমির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে তাদেরকে উত্তোলিত কয়লার ৫ ভাগ প্রফিট বোনাস দেওয়া এবং মাইনিং সিটি অথবা উন্নত জীবন যাপনের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের কারণে মাইন বিষ্ফোরণের জন্য ভূকম্পনে খনি সংলগ্ন গ্রামের ঘরবাড়ীতে ঝাকুনি, ফাটল, হেলে দুলে যাওয়াসহ মাটি দেবে গেছে। এতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। একই কারণে খাবার পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদন কমে গেছে সকল প্রকার শস্য ও শাক-সবজির। রাস্তাঘাট দেবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী আন্দোলনে নেমেছেন দাবি আদায়ের জন্য।
এদিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর সংগঠন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে খনি গেটে আবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বড়পুকুরিয়া, বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙা, মোবারকপুর, জব্বারপাড়া, রসুলপুর, চক মহেশপুর, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দুর্গাপুর, হামিদপুর ও পূর্ব শেরপুর এই ১২ গ্রামের সহ¯্রাধিক গ্রামবাসী।
খনি গেটে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দাবির সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা। এতে বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী, সহ-সভাপতি আলী হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো. হোসেন আলী, সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু শিবলী প্রমুখ।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য ২০১৬ সাল থেকে দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে আসছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীর দাবির প্রতি কোনো নজর না দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। খনি করতে গিয়ে এখানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকাবাসী পথে বসেছে। গত দেড় বছর ধরে জোড়ালো আন্দোলন চলছে। দাবি পূরণ না হওয়ায় অস্থান কর্মসূচি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে গ্রামবাসী।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের দেখাদেখি খনি থেকে একটু দূরে ১২ ড়গ্রামের লোকজনও ক্ষতিপূরণের দাবি তুলছে। এব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে ওই এলাকায় কম্পন হচ্ছে কী না? বা খনির কারণে কোন ইফেক্ট পড়ছে।


এসিজি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৫:০৭ ● ১১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ