ছাতকে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে ধীরগতি!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » ছাতকে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে ধীরগতি!
বৃহস্পতিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


ছাতকে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে ধীরগতি!

ছাতক(সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সুনামগঞ্জের ছাতকে ধীরগতিতে চলছে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। ফলে দু:চিন্তায় রয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। আগামী ২৮ ফেরুয়ারির মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছেন না সেই নির্দেশনা। উদ্বোধনের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত অধিকাংশ বাঁধের কাজ ৫০ ভাগ হয়নি। বেড়িবাধে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করতে প্রভাষক হয়েছেন পিআইসি কমিটির কৃষক।

জানা যায়, ছাতকে হাওরে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য ২৮টি পিআইসি রয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রায় দেড় মাস আগে
বাঁধের কাজ শুরু হয়। চলতি ফেরুয়ারি মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। ধীরগতিতে কাজ হওয়ায় এ পর্যন্ত অধিকাংশ বাঁধের কাজ ৫০ ভাগ হয়নি। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে বাকী কাজ যথা সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে অপূরণীয় ক্ষতিও হতে পারে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের সফল রক্ষা বাঁধ ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সরকার কৃষকদের বোরো ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এ বরাদ্দকৃত অর্থ অনুযায়ী সময় মতো টেকসই কাজ করা হলে এক মাত্র বড় ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়া ফসলের ক্ষতির কারণ নেই। এখানে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পেতে এবং পিআইসির কমিটিতে থাকতে প্রথমে অনেকেই জোর লভিং শুরু করেন। কাজ পাওয়ার পর সেই আগ্রহ থেমে যায়। চলে ইচ্ছামতো নিজের খেয়াল খুশিতে বাঁধের কাজ। এখানেও এমনটাই হচ্ছে। কম টাকার প্রকল্প বেশি টাকায় ধরা হয়েছে। তারপরও বাঁধের কাজে চলছে ধীরগতি। কাজের পাশে অধিকাংশ প্রকল্পের নেই কোন সাইনবোর্ড। পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠনে মাঠ পর্যায়ে ঘুস লেনদেনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের চানপুরের ৭ নং পিআইসিতে ৬০৫ মিটার ডুবন্ত বাঁধ ঢালা বন্ধকরন কাজে ৬ লাখ ৮৮হাজার ১শত ১৩ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বুকী নদীর পাড় দিয়ে প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হলেও বাঁধে কাজ হয়েছে মাত্র ২০-২৫ ভাগ। বাঁধে পর্যাপ্ত মাটি দেওয়া হয়নি। রাস্তা কুড়ে মাটির লেপন দিয়ে কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টায় পিআইসি কমিটি সদস্যরা। এমনটাই বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয় অনেকেই। বাঁধ নির্মাণে ট্রাক্টর যাতায়াতের নামে এক গরিবের ১০টি গাছ কেটে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন নামের ব্যক্তি প্রভাষক হলেও তাকে কৃষক দেখানো হয়েছে। এ বাঁধ নির্মাণে ইউনিয়নের মধ্যে সব চেয়ে বেশি অনিয়ম-দূর্ণীতির আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুপারভিশন কর্মকর্তা (এসও) ও মাঠ কর্মী ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুস দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বরাদ্দ করেছেন বলে একাধিক পিআইসি কমিটির অভিযোগ করেন। উপজেলার চরমহল্লাহ ইউপির ২০২৪ ২৫ অর্থ বছরে উপজেলার চান পুর ২ ৮ নম্বার পিআইসি ডুবন্ত বাধ ও ডালা বন্ধকরন ৭৭৩ মিটার কাজ। এখানে বরাদ্ধ করে ১৩লাখ ৯৮হাজার ১শ ৫৯ টাকা। এখানে কাজ কম,বরাদ্ধ বেশি রয়েছে। এছাড়া উপজেলার জাউয়াবাজার, দক্ষিন খুরমা,উত্তর খুরমা,নোয়ারাইসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম হচ্ছে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ হচ্ছেনা। ধীরগতিতে চলছে কাজ।

জাউয়াবাজার, চরমমহল্লা ইউনিয়নের একাধিক কৃষকরা জানান, পিআইসি যেভাবে ধীরগতিতে চলছে তাতে প্রতিবছরের মতো এবারও লুটপাটের শঙ্কা রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে পিআইসি শুরু হওয়ার পর থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকমীরা। তারা পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে পিআইসি নিজের পকেটে নিয়ে লুটপাট করেছেন। এবার সেই স্থানে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা। তাই লুটপাট ঠেঁকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ হবে।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে কোনো অভিযোগ না আসে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের (ডব্লিউএমজি) আওতায় আনা সম্ভব হলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোন অভিযোগ আসবে না। তাই ডব্লিউএমজির আওতায় এলাকার সব কৃষককে পৃথকভাবে সম্পৃক্ত করা হবে। ‘জমি যার জলা তার’-এর আওতায় কৃষকনির্ভর হাওর, কৃষকনির্ভর হবে বাঁধও। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো এসও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিক ভাবে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এব্যাপারে ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোন ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতি বা গাফিলতি সহ্য করা হবেনা। প্রমাণ পেলে যত বড় প্রভাবশালীই হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এর পরও যদি কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই দায়িত্ব তার নিজের। তিনি আরও বলেন,প্রতিটি প্রকল্পের পাশে অবশ্যই সাইনবোর্ড থাকতে হবে। যাতে সাইনবোর্ড দেখে যে কেউ কাজের বিষয় ও বরাদ্দের কথা জানতে পারে এবং অনিয়ম হলে প্রতিবাদ করতে পারে।


এএমএল/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৩:০৬ ● ২২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ