
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে বাড়ি-ঘর, চলাচলের রাস্তাঘাট, কৃষিজমি রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে বাপাউবো‘র সাথে আলোচনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ এলাকাবাসী।
রবিবার সকাল সাড়ে এগার টায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলমের দপ্তরে এ আলোচনা হয়। এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ফকু, ভুক্তভোগী কৃষক মো: মোশারফ হাওলাদার, মোঃ নূর ইসলাম, মোঃ আল আমিন, মোঃ মিজানুর রহমান এবং গণগবেষক মোসাঃ হালিমা আয়শা প্রমুখ। এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, “ আমরা পশ্চিম লোন্দা গ্রামের প্রায় ২৫০ দরিদ্র পরিবার বিগত ৪০বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করছি। আমরা জোয়ার ভাটায় ডুবি ভাসি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ প্রয়োজন।“ নির্বাহী প্রকৌশলী ভুক্তভুগীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত শোনেন। তিনি জেলা সমন্বয় সভা পশ্চিম লোন্দা গ্রামে বেড়িবাঁধ বিষয়ে উত্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন ।
এ এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও অমাবস্যা-পূর্নিমায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারে না। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই স্লুইসগেটসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় পরিবারগুলো। তারা বলেন, “আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। এই অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে আমাদের বাঁচান।“
কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর তীরে জেগে উঠা চরে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে প্রায় ২৫০টি পরিবার। যাদের অধিকাংশ বসতভিটা এবং ফসলী জমি বিএস জরিপে মালিকানা রেকর্ড হয়। কিছু পরিবার সরকারের খাস জমিতে বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস করছেন। বহুদিনে গড়ে উঠেছে এই জনপদটি। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকার ফলে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে থাকে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট এমনকি ফসলী জমি। জমিতে বীজ বোপনের পর আতংকে থাকে কৃষক। কখন পানি উঠে সব তলিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, “ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে ৪ দিন পর্যন্ত আমাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। জোয়ার-ভাটায় কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরে একবার চাষাবাদ করতেও আমাদের কষ্ট হয়।“
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ফকু বলেন, আমাদের প্রায় ২০০ একর জমি তলিয়ে থাকে। তিন ফসলী এই জমি অথচ আমরা এক ফসলও চাষাবাদ করতে পারি না। আমরা অনেক কষ্টের মাঝে আছি। আমাদের এখানে একটা টেকসই বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন।
হালিমা আয়শা বলেন, আমরা এই এলাকার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেববক মিলে দীর্ঘ দুইমাস ধরে একটি গবেষণা করেছি। আমাদের গবেষণায় এই এলাকার বিভিন্ন সমস্যা পেয়েছি যার মধ্যে কৃষি উৎপাদন কম হওয়া, যাতায়ত ব্যবস্থার সমস্যা পেয়েছি। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে অনাগ্রহী। সুচিকিৎসার অভাব। সব কিছুর মূলে গিয়ে একটা সমস্যা পেয়েছি যে টেকসই বেড়িবাঁধ নেই।
উল্লেখ্য গত বছর অক্টোবর মাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবন্ধন, জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছে।
প্রেসনোট/এমআর