ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকেল ৪টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গণভবনে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরের যাওয়া ঠিক হবে কি না, এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে এবং নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়গুলো সরকার প্রধানকে জানাতে গণভবনে যেতে চান নুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান নুরুল হক নুর।
আপনি ও আপনার প্যানেল থেকে ডাকসুতে দুজন নির্বাচিত হয়েছেন। আপনারা গণভবনে যাবেন কি নাÑএ প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর বলেন, তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তিনি আমাকে একা ডাকেননি। যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, সবাইকে ডেকেছেন। স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদেরও ডেকেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হলেও আমাকে শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা, আমি সেগুলো তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বলব। আমি যাওয়ার বিষয়ে পজিটিভ, যেন আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারি। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ করেন।
তখন নুর বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনের নামে সন্ত্রাসীদের হাতে বারবার রক্তাক্ত হয়েছি। তখন আমার এ ভাইবোনরাই আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং তারা না চাইলে দায়িত্ব গ্রহণ কিংবা দেখা করতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ডাকসুর নতুন ভিপি বলেন, আমি প্রথম থেকে পুনর্নির্বাচনের দাবি করে আসছি। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে সমস্যাগুলো জানাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েও তাঁর দায়িত্ব রয়েছে। অনিয়ম-কারচুপির পরেও নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রধানমন্ত্রী চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন সেটা সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি একা বললে তো হবে না, এখানে আরো অনেকে রয়েছে, যারা স্বতন্ত্রভাবে মেয়েদের হলে নির্বাচিত হয়েছে। স্বতন্ত্র প্যানেলগুলো রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে ফাইনাল ডিসিশন নেব। কারণ, তারা যদি এগ্রি না করে তাহলে তো আমি যেতে পারব না। আশা করি, তারা হয়তো এগ্রি করবে।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন না আসার সমালোচনা করে ডাকসুর নতুন ভিপি বলেন, আমি অবাক হলাম, অনশনরতরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান ও শিক্ষার্থী। অথচ তাদের দেখতে এখন পর্যন্ত কেউ আসেননি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর বলেন, আমার ব্যক্তি ইমেজকে নষ্ট করার জন্য ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কিছু ছড়ানো হচ্ছে। আমি আগেও বলছি, এখনো বলছি আমি আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তবে আমি এখন কোনোভাবেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ পরিষদের পক্ষ হতে আমি ডাকসুতে নির্বাচন করেছি। সুতরাং এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
নুর বলেন, আমি আগে ছাত্রলীগ করেছি। আমার মনে হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে কিছু কাজ আমার নৈতিকতায় সায় দেয় না। সে জন্য আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর গত ১১ মার্চের ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ২০ প্রার্থীকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন।
১৩ নম্বর ব্যালট নিয়ে তিনি পান ১১ হাজার ৬২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ১৬ নম্বর ব্যালট নিয়ে তিনি পান ৯ হাজার ১২৯ ভোট। নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে জিএস, এজিএসসহ ২৩টি পদই পেয়েছে ছাত্রলীগের প্যানেল। আর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পেয়েছে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ। নির্বাচনে কারচুপি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ পাঁচটি প্যানেল পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নুরুল হক নুর ২০১৫ সালের ৭ জুন অনুমোদন পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের উপমানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ছিলেন।
এফএন/কেএস