সাগরকন্যা ফুলবাড়ি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি॥
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে টানা কয়েকদিন ধরে ক্রমশই কমছে তাপমাত্রা। দিনেরাতে হিমশীতল বাতাসের কারণে উপজেলায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করতে ছোটবড় যানবাহন।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ৬ টায় দিনাজপুর জেলায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। তবে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে হাঁড় কাপানো শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সড়কগুলো যানবাহন চলাচল করলেও কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে। মানুষজন কম থাকায় পৌরশহরের সড়কগুলোতে রিকশা-ভ্যানের যাত্রী শূন্যতা দেখা গেছে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে শীত আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন দিনমজুর আর ক্ষেতমজুররা। আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুর ২টা পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে সূর্য্যরে মুখ দেখা যায়নি। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। শীতের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংখ্যা বেশি।
পৌরশহরের রিকশাভ্যান চালক আফজাল হোসেন বলেন, কনকনে শীতের জন্য রিকশা নিয়ে বাইরে যেতে মন চায় না। তাছাড়া সকালে লোকজনও কম থাকছে। এজন্য আয়ও কমে গেছে। শীতের কারণে দিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হচ্ছে। অন্য সময় গড়ে দিনে ৫০০ থেকে ৭০ টাকা আয় হয়ে থাকে।
ক্ষেতমজুর ইলিয়াস হেম্ব্রম বলেন, এ সময় ক্ষেতে খুব ঠান্ডা লাগে, এজন্য সকালে ক্ষেতে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু কাজ না করলে বাড়ীর লোকজনের মুখে খাবার জুটবে না, এজন্য শীত আর কুয়াশার মধ্যেই কাজে যেতে হচ্ছে। তবে জমির ঠান্ডা পানিতে হাত-পা জমে আসার উপক্রম হচ্ছে।
উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জানিপুর গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান বলেন, বাঁধাকপি লাগিয়েছেন এক বিঘা জমিতে। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে সকালে ক্ষেত থেকে বাঁধাকপি তুলে বিক্রির জন্য বাজারে আনা যাচ্ছে না। এতে করে ক্ষেতের বাঁধাকপি বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সানাউল্লাহ বলেন, উপজেলার দুস্থ শীতার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৭০ টি কম্বল এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ ৩ লাখ টাকা দিয়ে আরো ৯১০ টি কম্বল কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কম্বলগুলো উপজেলার এতিমখানাসহ, ছিন্নমূল মানুষ ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের যাতে শীত না লাগে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।