চরফ্যাশনে জাল সনদে শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চরফ্যাশনে জাল সনদে শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ!
শনিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৪


চরফ্যাশনে জাল সনদে শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ!

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

২০২২সনে মাদ্রাসা এমপিওভক্তির পর শিক্ষাগত সনদ টেম্পারিং করে নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক পদে ২০২৩ সনের এপ্রিল মাসে এমপিও ভুক্ত হন সুলতানা রাজিয়া নামের এক নারী। যার ইনডেক্স নম্বর গ০০৩৭৪১৪।
জানাগেছে,অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদনে পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ রেজুলেশন, এমপিও ভুক্তির আবেদন,সনদ পত্র সমুহের  স্ক্রিনশট দাখিল করতে হয়। সে অনুযায়ী ২০০৮ সনের ৩ জানুয়ারীর দৈনিক ইনকিলাব ও আজকের পরিবর্তন পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি দাখিল করা হয়। কিন্তু ঐদিন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় এই মাদ্রাসার কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া নিয়োগের ৩টি রেজুলেশনে ফ্লুইড ব্যবহার করে অন্যের নাম মুছে সেখানে একটি রেজুলেশনে সুলতানা রাজিয়া লেখা হয়েছে। দুটি রেজুলেশনে শিক্ষকের নামের স্থান ফাঁকা আছে। ২০১০ সনের ২৬ জুন এবতেদায়ী শিক্ষক নিবন্ধন চালু হয়। নিবন্ধন এড়াতে নিবন্ধন চালুর পর ২০১১সনে প্রকাশিতব্য বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের এইচ.এস.সি সনদ (শিক্ষার্থী আইডি নম্বর ০৮-০-১১-৫৪০-০২৭, সিরিয়াল নম্বর ০১০৪৪৩) কম্পিউটারে টেম্পারিং করে ২০১০এর স্থলে ২০০৮ করা হয়েছে। মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্তির পর চরফ্যাশনের এক দালাল মোটা অংকের টাকা নিয়ে সুপার রুহুল আমিনকে সড়িয়ে মাদ্রাসার এমপিও পাসওয়াড সংগ্রহ করে সহ-সুপার ওহাবকে ভারপ্রাপ্ত সুপার দেখিয়ে তার স্বাক্ষরে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে আবেদন করে সুলতানা রাজিয়াকে এ পদে এমপিও ভুক্ত করান। ফলে এই পদে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন ২০০৪ সনে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান এমপিও বঞ্চিত হয়ে ২০২৪ সনের ১১জানুয়ারি মাদ্রাসা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। ২৮ জানুয়ারী মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (অর্থ) ও এমপিও বাছাই ও অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব মো.লুৎফর রহমান সুলতানা রাজিয়ার এমপিও স্থগিত করে ৫৭.২৫.০০০০.০০২.০৮.০১০.২১-২৬ নম্বর স্মারকে সুলতানা রাজিয়াকে এবিষয়ে ৭দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে এবং মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত হওয়া সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। কিন্তু এমপিও স্থগিতের পর ৬ মাসেও সুলতানা রাজিয়া কারণ দর্শাননি। যার প্রেক্ষিতে ২০২৪ সনের ২৬ জুন মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্তে জাল সনদে অবৈধ ভাবে এমপিও ভুক্ত হওয়া সুলাতানা রাজিয়াকে চুড়ান্ত বরখাস্ত করে এমপিও থেকে নাম কর্তন পূর্বক উক্ত পদে মিজানুর রহমানকে এমপিওর ব্যবস্থা গ্রহনে মাদ্রাসা সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সে মোতাবেক মাদ্রাসা সুপার ২০২৪ সনের ৩ সেপ্টেম্বর এমপিও থেকে সুলতানা রাজিয়ার নাম কর্তনের জন্য সুপার মো. রুহুল আমিন এবং সভাপতি তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক স্বাক্ষরিত একটি আবেদন মাদ্রাসা অধিদপ্তরে পাঠান । মাদ্রাসা অধিদপ্তর ১৮ সেপ্টেম্বর ৫৭.২৫.০০০০.০০৯.৫৪.০০১.২৩.১০৪ স্মারকে আবেদনটি নিস্পুত্তির লক্ষ্যে সুলতানা রাজিয়ার একাডেমিক সনদ পত্র ,নিয়োগপত্র, যোগদান পত্র, নিয়োগ পরিক্ষার ফলাফল শীট, রেজুলেশনসহ সকল কাগজ পত্র যাছাই বাছাই করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে মতামত দেয়ার জন্য তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা নওরীন হক সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদদ আবুল হাছনাতকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
কিন্তু এনিয়ে অভিযুক্ত সুলতানা রাজিয়া পক্ষের দেন দরবারের কারণে দির্ঘ তিন মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন মাদ্রাসা অধিদপ্তরে যায়নি। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা নওরীন হক বদলির পর তদন্ত কর্মকর্তা সহকারি কমিশনার গত ১১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহি কর্মকতার কার্যালয়ে  এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেন। যা গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে সুলতানা রাজিয়া জুনিয়র শিক্ষক পদে এইচ এস সি কোঠায় নিয়োগের সময়কাল ১৪-০৩-২০০৮ এবং তিনি বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১সনের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিতব্য এইচ এস সি সনদ (যার  শিক্ষার্থী আইডি নং ০৮-০-১১-৫৪০-০২৭, সিরিয়াল নং০১০৪৪৩) পাশের সন ২০১০, জিপিএ ৩.৫০ প্রতিবেদনে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু ২০১০ সনে এইচ এস সি পাশ করা সুলতানা রাজিয়া ২০০৮ সনে কিভাবে এইচ এস সি কোঠায় নিয়োগ পান এবং জুনিয়র শিক্ষক পদে এমপিও ভুক্তি হন সে মন্তব্য না করে অজ্ঞাত কারণে তিনি সুপারের উপর দায় চাপিয়ে সুলতানা রাজিয়ার বেতন ভাতাদি চালু করা যেতে পারে মর্মে প্রতিয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয়রা মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গোজামিলের প্রতিবেদনটি দিয়েছেন।
অভিযোগকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন এড়িয়ে মাদ্রাসা সুপার রুহুল আমিনসহ এক দালাল বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের সুলতানা রাজিয়ার ২০১০ সনে এইচ পাশের সনদ কম্পিউটারে টেম্পারিং করে ২০২২ সনে  মাদ্রাসা এমপিও ভুক্তির পর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ২০০৮সনে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও ভুক্ত করান। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে ২০০৮ সনে নিয়োগ এবং ২০১০সনে এইচ এস সি পাশের বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। ২০১০সনে এইচ এস সি পাশ করা সুলতানা রাজিয়া ২০০৮ সনে কিভাবে এইচ এস সি কোঠায় জুনিয়র শিক্ষক পদে এমপিও ভুক্তি হন সে মন্তব্য না করে সুলতানা রাজিয়ার বেতন ভাতাদি চালু করা যেতে পারে মর্মে যে মন্তব্য করেছেন তা একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অনভিজ্ঞতার পরিচয় বলে মনে করেন ভোলার শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার পদে থেকে তার এমন ভুল মন্তব্যে সকলে হতবাক হয়েছেন। ভবিষ্যতে তার এমন ভুল সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হবেন বলেও তারা মন্তব্য করেন।
হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, সুলতানা রাজিয়াকে আমি নিয়োগ দেইনি। কে বা কাহারা মাদ্রাসার এমপিও আইডি পাসওয়ার্ড সরিয়ে নিয়ে তাকে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন তা আমার জানানাই।
এদিকে অনিয়ম এড়িয়ে এমন একটি প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে সদ্য বিদায়ী সহকারি কমিশনার মোহাম্মদ আবুল হাছনাত বলেন,মাদ্রাসা সুপার আমাকে যে সমস্ত কাগজ পত্র সত্যায়িত করে দিয়েছেন আমি ঐ সকল কাগজ পত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখানে আমার কোন দায় নাই।
এ ব্যাপারে সদ্য যোগদানকারী চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহি অফিসার রাসনা শারমিন মিথি বলেন, এসিল্যান্ডের তদন্ত প্রতিবেদনটি মাদ্রাসা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মাদ্রাসা অধিদপ্তর এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
এদিকে এমন একটি অপ্রত্যাশিত তদন্ত রিপোর্টের পর অধিকারবঞ্চিত শিক্ষক মিজানুর রহমান এখন হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন,এ চাকুরীটা না পেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমাকে দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হবে।


এএইচএমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৯:৪৪ ● ৭৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ