গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদী উপঝেলার বেজগাতি সুইজ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির সময় ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মারা যাওয়ার ১৩ দিন পর প্রসূতি মা সাবিহা বেগম (২০) মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে কালকিনি উপজেলার উত্তর রমজানপুর গ্রামের বাবা আবুল কালাম সরদারের (বাপের) বাড়িতে বসে সে (সাবিহা) মারা যায়। কথিত ২ নার্স দিয়ে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নরমাল ডেলিভারী করানোর সময় নবজাতক মারা যাওয়ায় ও প্রসূতি মা (রোঘী) অসুস্থ হয়ে পরার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য স্বজন ও স্থানীয় নেতাদের দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আপোষ মিমাংসা করার অভিযোগ করেছেন নিহত প্রসুতি (রোগী) সাবিহার বাবা।
নিহত প্রসুতি (রোগী) সাবিহার বাবা আবুল কালাম সরদার বলেন, আমার মেয়ে সাবিহা বেগমের (২০) প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ২১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেজগাতি সুইজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে সেখানে কোন এমবিবিএস ডাক্তার না থাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি) সঞ্জীব মজুমদার প্রসূতি সাবিহাকে ভর্তি করেন। রাত তিনটার দিকে কথিত নার্স জেসমিন আক্তার ও লিমা আক্তারকে দিয়ে সাবিহার নরমাল ডেলিভারী করার চেষ্টা চালায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে বাচ্চা প্রসবে দেরি হওয়ায় সাবিহার বুকে-পেটে জোরে জোরে চাপ দিয়ে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে একটি নবাজাতক ছেলে সন্তান বের করে কথিত নার্সরা। এ সময় প্রসাব ও পায়খানার রাস্তা কেটে এক করে ফেলার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তখন নবজাতক অচেতন থাকায় ও নবজাতক কান্নাকাটি না করার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে তাৎক্ষনিক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরার্মশ দেয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে শোবচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন নবজাতক হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছে।
নিহত প্রসুতির বাবা আবুল কালাম সরদার কান্না জড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ২২ নভেম্বর সকালে নবজাতক মারা যাওয়া ও আমার মেয়ে গুরতর অসুস্থ হয়ে পরার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ২২ নভেম্বার সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার বড় মেয়ে জামাতা মেহেদী আকন ও সাবিহার স্বামী মেঝ জামাতা সবুজ মোল্লার সাথে আপোষ মিমাংসা করে কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। রক্ত শূন্যতা দেখা দিলে ওইদিন সকালে সাবিহার শরীরে এক ব্যাগ রক্ত পুশ করে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে পরদিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর গত শনিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সাবিহা গুরতর অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাৎক্ষনিক তাকে গৌরনদী গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করলে রক্ত শূন্যতার কথা জানান তারা। এ সময় সাবিহার শরীরে রক্তের স্যালাইন না চললে গৌরনদী গ্রীণ লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দিলে সাবিহাকে ঢাকায় নিয়ে ওইদিন ভোররাতে একটি হাসপালে ভর্তি করি। সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবিহার শরীরে রক্তের স্যালাইন না চলায় তারা ৩ ডিসেম্বর সাবিহাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বেজগাতি সুইজ হাসপাতালের কথিত ২ নাসের্র ভুল চিকিৎসায় ও প্রসাব-পায়খানার রাস্তা কেটে একত্র করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে আমার মেয়ে সাবিহা ৪ ডিসেম্বর সকালে ও আমার নাতি (নবজাতক) মারা যায়। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা আনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেইনি। তবে চিকিৎসা অবহেলা ও গাফলতির অভিযোগ এনে সাবিহার স্বামী সবুজ মোল্লা ও তার শ^শুর লতিফ মোল্লাকে আসামি করে বুধবার দুপুরে থানায় গৌরনদী একটি লিখত অভিযোগ করেছি।
সাবিহার বড় ভগ্নিপতি মেহেদী আকন বলেন, আমার অসুস্থ শালিকা সাবিহার উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমি ১ লাখ টাকা এনে ভায়রা (সাবিহার স্বামী) সবুজ মোল্লার হাতে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ও চিকিৎসার খরচ নেয়নি। এদিকে সবুজ মোল্লা ১ লাখ টাকা নেয়ার পরেও অসুস্থ সাবিহার চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখেনি এমনকি সবুজ ও তার পরিবারের কেউই সাবিহাকে দাফন করতে আসেনি।
সুইজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডিএমএফ (গ্রাম্য চিকিৎসক) সঞ্জীব মজুমদার বলেন, হাসপাতলে কোন এমবিবিএস ডাক্তার নেই। রিতা নামে মাত্র একজন ডিপ্লোমা নার্স রয়েছেন।
সুইজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রুপা খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নবজাতকের স্বজন বা কোন নেতাকর্মীকে আপোষ মিমাংসার জন্য আমি কোন টাকা দেইনি। তবে তাদের থেকে মানবিক কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ নেইনি ও এ্যা¤ু^লেন্সের ভাড়া আমরা দিয়েছি।
সাবিহার স্বামী সবুজ মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ৪ ডিসেম্বর সকালে আমি ও আমার বাড়ির লোকজন শ^শুর বাড়িতে গিয়েছিলাম।
গৌরনদী থানার ওসি ইউনুস মিয়া জানান, চিকিৎসা অবহেলা ও গাফলতির অভিযোগ এনে সাবিহার বাবা আবুল কালাম সরদার বাদী হয়ে স্বামী সবুজ মোল্লা ও তার শশুর লতিফ মোল্লাকে অভিযুক্ত করে গৌরনদী থানায় একটি লিখত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষ্যে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনলাম, ভুল চিকিসায় ও নর্মাল ডেলিভারীর সময় নবজাতক ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার সংবাদ যুাগন্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আমার নজরে আসেনি। পত্রিকা সংগ্রহ করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএসআর/এমআর