দেবহাটা (সাতক্ষীরা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
দক্ষিণাঞ্চলের মাদক সম্রাট ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ কর্মী, মাদক সহ বিভিন্ন মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী জাহিদুর রহমান জুয়েল ও তার এক সহযোগীকে ২শ বোতল ফেনন্সিডিলসহ গ্রেফতার হয়েছে। শুক্রবার (৯ নভেম্বর) রাত নয়টার দিকে দেবহাটার পুস্পকাটি এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন দেবহাটা উপজেলার ভেন্নাপোতা গ্রামের মোশারফ হোসেন সরদারের ছেলে ও ইউপি সদস্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান জুয়েল (৩৩) ও সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর চাপারডাঙ্গী এলাকার মোশারফ হোসেন সরদারের ছেলে জয়নাল আবেদীন সরদার(৪৫)।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেবহাটা উপজেলায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পুষ্পকাটি বিসমিল্লাহ ব্রিকসের সামনে সাতক্ষীরা টু শ্যামনগর গামী পাকা রাস্তার উপর হতে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জুয়েল মেম্বার ও তার সহযোগীকে ভারতীয় ফেনন্সিডিলসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি। তাদের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় নিয়মিত মাদক মামলা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ যে, জুয়েল শীর্ষ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মাদক মামলার আসামী, দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত ব্যক্তি। মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে স্ত্রীদের এ কাজে ব্যবহার করেন। সাম্প্রতিক তার এক স্ত্রীর ৪ বার গর্ভপাতের বিষয় থানায় অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উভয় পক্ষের বক্তব্য সহ সংবাদ প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে স্বৈরাচার সরকারের সহযোগী জুয়েল রাজনৈতিক শক্তির প্রভাব খাঁটিয়ে সংবাদকর্মীদের দমন ও হয়রানি করতে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি মীর খায়রুল আলম, দৈনিক প্রজন্ম ৭১ পত্রিকার কবির হোসেন, দৈনিক পত্রদূতের দিপঙ্কর বিশ্বাস, দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল পত্রিকার এসএম নাসির উদ্দীন ও শহিদুল ইসলাম সহ ৬ জনের নামে মিথ্যা মামলার দায়ের করে। যার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। পরে ওই ঘটনার তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলার সত্যতা পায়নি সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এদিকে, ২০২১ সালের বছরের ১৮ জানুয়ারি সাতক্ষীরা থেকে পিকআপ ভ্যানে মাদকের এক বড় চালান খুলনাতে সরবরাহকালে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার গ্রেফতার হয় জাহিদুর রহমান জুয়েল। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে (নং-১১/২১) মামলা দায়ের হয়। এছাড়াও জাহিদুর রহমান জুয়েলের বিরুদ্ধে পটুুয়াখালী সদর থানায় আরেকটি মাদক মামলা রয়েছে (নং-৫৩/১৮) বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া জাহিদুর রহমান জুয়েল আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় মাদকের একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে এ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ভারত থেকে মাদক পাচার করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি সহ দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেন। বিগত সরকারের আমলে সে সীমান্তে মাদক, চোরাচালান, মানবপাচার সহ অসংখ্য অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আতœগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগ সদস্য, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল। কিন্তু গোপনে থেকেও আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে কয়েক কোটি টাকার মাদকের চালান পাঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। বিভিন্ন সময় মাদক বিরোধী অভিযানে আটক হওয়ার পর মোটা অংকের টাকা দিয়ে জনকে ম্যানেজ করে চলতো সে। তার এই অপর্কের জন্য নিজ এলাকায় থাকতে পারেন না তিনি। সাতক্ষীরা শহরের কামানগর ও কাটিয়া সরকারপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। দুশ্চরিত্র এবং কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী জুয়েলের কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে কুলিয়ার সাধারণ মানুষ। তাছাড়া এলাকায় না থাকায় মেম্বারের কাছ থেকে নানা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়ার্ডবাসী। একজন জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডের অতিষ্ঠ হয়ে ইউপি সদস্যর মত সম্মানীয় পদ থেকে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
কেই/এমআর