কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বালু ক্ষয়, ভাঙন সহ নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবং প্রতিনিয়ত ঢেউয়ের ঝাপটায় ধুয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতের বালু। সৈকত লাগোয়া বনাঞ্চলের কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পড়ে আছে সৈকতে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সরজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটায় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পূর্ব দিকে কাউয়ার চর নামক স্থান পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে বিভিন্ন প্রকারের বড় বড় গাছ পড়ে আছে। জোয়ার পানিতে এই গাছ গুলি গভীর সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে।
সৈকত ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে একটু পূর্ব দিকে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন রকম বড় বড় গাছ এলোমেলো ভাবে সৈকতে পড়ে আছে। কিছু গাছ ইতিমধ্যে বালুর নিচে চাপা পড়ে গেছে। অনেক গাছ ভেসে যাচ্ছে। গাছগুলো নিলামে দিলে সরকারের যেমন কোটি টাকা আয় হবে অন্যদিকে সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ মোতালেব মাঝি বলেন, কয়েক কিলোমিটার বন আঞ্চল ইতিমধ্য সমুদ্রে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আকাশমনি, রেনটি, ঝাউ, জাম, কেওড়া, সইলা, নারিকেল, তালগাছ সহ কোটি কোটি টাকার গাছ বালুর নিচে চাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে। এগুলোর দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত ।
জানা যায়,গত কয়েক দিনের সাগরের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে সৈকত লাগোয়া টুরিজম পার্ক, মসজিদ, মন্দির, টুরিস্ট পুলিশ বক্স ও বিশাল বনাঞ্চল। বর্তমানে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত একেবারেই সৌন্দর্যহানি হয়ে পড়েছে।
ফরিদপুরের সালথা থেকে আসা জাকারিয়া ও রুমানা দম্পতি বলেন, সৈকতে যে সারি সারি গাছগুলো পড়ে আছে এর কারনে সূর্য উদয় পয়েন্ট, লাল কাঁকড়াচর যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য। গাছগুলোর প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বন বিভাগের নজর দেওয়া উচিত। এতে সরকারের যেমন আয় হবে অন্যদিকে পর্যটকদের ভোগান্তি কমবে ।
পরিবেশবিদের মতে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় হুমকির মুখে পরে উপকূলের বনাঞ্চল।
এবিষয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, পর্যটন এলাকার লোকাল কমিউনিটির জন্য বিচ নরেসমেন্ট করা জরুরি। নরেসমেন্ট প্রসেসটা হলো রিকারিং এর সাথে সাথে যে ধরনের প্লান্টেসন আছে এগুলা রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। সজুব গাছ প্রতিনিয়ত এভাবে ধ্বংস হতে থাকলে এটি উপকূলর জন্য হুমকি।
এবিষয় উপকূলীয় বিভাগীয় বন কর্মকতা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, গাছগুলি ন্যাচারাল বেরিয়ে হিসেবে কাজ করবে। সাগর প্রতিনিয়ত ভাঙছে এবং সাগরের ঢেউ প্রতিরোধ করে পাশাপাশি মাটির ক্ষয় রোধ করে। এই গাছগুলো অপসারণ বা নিলামে বিক্রি করা হবে না।
জেএফ/এমআর