তালতলীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বিদ্যুতের খুটিতে বেঁধে নির্যাতন!

প্রথম পাতা » বরগুনা » তালতলীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বিদ্যুতের খুটিতে বেঁধে নির্যাতন!
সোমবার ● ৭ অক্টোবর ২০২৪


তালতলীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বিদ্যুতের খুটিতে বেঁধে নির্যাতন!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

তালতলী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে (৩০) বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা এমন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার। পরে তারা সুমনকে তালতলী থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে নির্যাতন শেষে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ওই বিদ্যুতের খুঁটিতে সুমনেক বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি আহবায়ক শহীদুল হক ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে  নিন্দা ও শাস্তির দাবী ওঠেছে। ঘটনা ঘটেছে রবিবার সন্ধ্যায় তালতলী বাজারের শহীদুল হকের বাসার সামনে। তবে তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র দুই কর্মী ফোরকান হোসেন ইমরান ও জহিরুল হক ছোট্টকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মী কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। ওই ঘটনার রেশ ধরে মামলার বাদী পক্ষের লোকজন সুমনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের কথা তিনি অস্বীকার করেছেন। জখম জহিরুল হক ছোট্ট তার ছোট ভাই। সোমবার দুপুরে পুলিশ সুমনকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরন করেছে। ওইদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে বরগুনা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানাগেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তালতলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের জের ধরে একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুলাল হাওলাদার বাদী হয়ে ৪৯ জনের নামে তালতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় সুমন বাবা-মায়ের জন্য তালতলী বাজার থেকে ঔষধ কিনে গাড়ীতে বাড়ী ফিরছিল। তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হকের বাসায় সামনে তার গাড়ী আসামাত্রই শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী তাকে টেনে হেঁচরে গাড়ী থেকে নিচে নামায়। পরে তাকে সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধরক মারধর করে। প্রায় ২০-২৫ মিনিট তার ওপর নির্যাতন চালায় তারা। তার ওপর শহীদুল হক ও তার লোকজনের এমন নির্যাতনের দৃশ্য স্থানীয়রা প্রত্যক্ষ করেন কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন। নির্যাতন শেষে তারা সুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক ও তার দুই ছেলেসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী ওঠেছে। সোমবার দুপুরে পুলিশ যুবলীগ কর্মী সুমনকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরন করেছে। ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সুমনকে গাড়ী থেকে নামিয়ে শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ ১০-১২ জন বিএনপি নেতাকর্মী বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধরক মারধর করেছে। এমন ঘটনার শাস্তি দাবী করছেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে জাফরুল হাসান সুমন বলেন, বাবা-মায়ের জন্য ঔষধ কিনে বাড়ী ফেরার পথে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ ১০-১২ জন বিএনপি নেতাকর্মী আমাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে তারা আমার ওপর অমানষিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে তারা আমাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
তালতলী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমার ছেলেকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শহীদুল হক, তার দুই ছেলে ও বিএনপির নেতাকর্মীরা মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আমি শাস্তি দাবী করছি।
তালতলী থানার ওসি মোঃ কালাম খাঁন বলেন,  মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জাফরুল হাসান সুমনকে  উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। তবে তাকে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পুলিশ পায়নি। সুমন তদান্তাধিন একটি মামলার আসামী। তিনি আরো বলেন, সুমনকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

 

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৫:২৪ ● ৩৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ