ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ভোটাধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগের ভোট জয়ের উৎসবকে জনগণের সঙ্গে মশকরা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের সমালোচনা করে এ মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ নাকি এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ভোটাধিকারহারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাক্যহারা। এ অবস্থায় তাদের নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তার দলকে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ নাকি এবার স্বতঃস্ফূর্ভভাবে ভোট দিয়েছে। তার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা ভেবে পাচ্ছে না। জনগণ মনে করে ভুয়া ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ ভোটের আগের দিন রাতেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শনিবার ভুয়া ভোটের সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের পর উৎসব করছেন তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন অবশ্যই সঠিক ছিল না। বিবিসির হেড লাইন ছিল গণতন্ত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ।
রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকার কখনোই টিকতে পারে না, ভয় দেখিয়েও বেশি দিন টেকা যায় না। ম্যাকিয়াভেলির নীতি অবলম্বন করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে রিজভী আরো বলেন, বৈধতা পেতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেনদরবার করছে সরকার। ভোটের পর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ‘পৈশাচিক উল্লাসে বেপরোয়া’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
সুবর্ণচরের পর নোয়াখালীর কবিরহাটে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের উদাহরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ধানের শীষের ভোট দেওয়ার অপরাধে সুবর্ণচরের নির্যাতিতা পারুল বেগমের আহজারি ও গোঙানি থামতে না থামতেই নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে মা ও ছেলে-মেয়েদের জিম্মি করে তিন সন্তানের মাকে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা গণধর্ষণ করেছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে সুবর্ণচরে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের এক নেতার ‘সাঙ্গোপাঙ্গোদের’ বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই শুক্রবার রাতে কবিরহাটে ঘরের সিঁধ কেটে ঢুকে আরেক গৃহবধূকে ধর্ষণের খবর আসে। এরইমধ্যে ওই ঘটনার প্রধান অঅসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কবিরহাটের নির্যাতিত গৃহবধূর রাজমিস্ত্রি স্বামী ভোটের আগে মারামারির এক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তবে ওই গৃহবধূর স্বামীকে স্থানীয় যুবদলের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ধর্ষিতার স্বামী ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যিনি মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি। এই গণধর্ষণ শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, মনুষ্যত্বহীনতার এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, ভুয়া ভোটের মিথ্যা জয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। কুৎসিত অপকর্ম করতে তারা এখন বেপরোয়া। আমি নোয়াখালীর কবিরহাটে ধর্ষণের ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। কবিরহাটে নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান রিজভী। লক্ষ্মীপুরের বসিকপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুননবীকে গুলি করে আহত করার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার দাবি করেন তিনি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর