আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুবন্ধির বাঁধ আমতলী উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদ। বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের কৃষকদের জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ বাঁধ কাটার দাবীতে মঙ্গলবার সুবন্ধি বাঁধ এলাকায় ভুক্তভোগী কয়েকশ কৃষক বিক্ষোভ মিছিল করেছে । দ্রুত বাঁধ কেটে দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, কয়েকশত বছরের পুরাতন নদী চাওড়া। এ নদীটি হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ও কুকুয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দিয়ে প্রবাহিত। চার ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধীক মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এ নদী। এ নদী দিয়ে ব্যবসায়ীরা নৌপথে আমতলী, তালুকদার বাজার, অফিস বাজারসহ বিভিন্ন হাটে আসা যাওয়া করতো। এতে অন্তত বছরে কয়েকশত কোটি টাকা আয় হতো। কিন্তু জোয়ারের পানিতে হলদিয়া ইউনিয়নের একটি অংশের শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হতো। ওই শতাধিক পরিবারকে রক্ষায় ১৯৯০ সালে সুবন্ধি নামক স্থানে স্থানীয়রা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি আবার শুকনো মৌসুমে নদীর পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে এলাকার পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মানুষ ও গবাদিপশু ওই নদীর পানি ব্যবহার করতে পারেনা। ফলে চার ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ চরমভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্তরা পাঁচ বছরের মাথায় ওই বাঁধ কেটে দেয়। পুনরায় নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। বাঁধ কাটার ১৬ বছরের মাথায় অর্থ্যাৎ ২০০৮ সালে ওই এলাকার শতাধিক পরিবারকে রক্ষায় তৎকালিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ তালুকদার পুনরায় বাঁধ নির্মাণ করেন। বাঁধ দেয়ায় গত ১৬ বছর আমতলী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধীক মানুষ আবারো চরম দুর্ভোগে পরেছে। বর্তমানে বাঁধের কারনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে এ বাঁধের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শণে আসেন বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব। তার উপস্থিতিতে কয়েকশত মানুষ বাঁধ কাটার দাবীতে বিক্ষোভ করেছে।
ভুুক্তভোগী যমুনা বেগম কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, এ বান্দের লইগ্যা মুই রোগা। গাঙ্গের পানি পইচ্চা গ্যাছে। মানুষ ব্যবহার হরতে পারে না। মোর একটু জাগা আলহে মুই হেই জাগা চইতে পারি না। এই বাঁধ হহালে কাইট্ট্যা দেয়ার দাবী হরি।
ভুক্তভোগী সেলিম সিকদার বলেন, গত আট দিন ধরে জমির বীজ ভিজিয়ে রেখেছি কিন্তু পানির কারনে জমি চাষাবাদ করতে পারছি না। বীজ ঘরে বসে পচে যাচ্ছে। অন্তত লক্ষাধিক মানুষকে বিপদে ফেলে শতাধিক পরিবারকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে এ বাধ। দ্রুত এ বাঁধ কেটে দেয়ার দাবী জানান তিনি।
সুবন্ধি এলাকার হারুন অর রশিদ মৃধা বলেন, বাঁধ কেটে দিলে এই এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভুক্তভোগী চাওড়া ইউপি সদস্য জসিম গাজী বলেন, এ বাঁধের কারনে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রুত এ বাধ কেটে দেয়ার দাবী জানান তিনি।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের ৮০ ভাগ মানুষের ক্ষতি হয় এটা যেমন চরম সত্য আবার বাঁধ কেটে দিলে ২০ ভাগ মানুষের ক্ষতি হবে এটাও সত্য। তবে ২০ ভাগ মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে বাঁধ কেটে দিলে সমস্যা নেই।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও বরগুনা জেলা বার সহ-সভাপতি অ্যাড. মোঃ মহসিন হাওলাদার বলেন, লক্ষাধিক মানুষকে রক্ষা করতে হলে সুবন্ধি বাঁধ কাটার বিকল্প নেই। এই বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের মানুষ অর্থনৈকিভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাধ কাটলে যে কয় পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই পরিবারগুলো রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে আর সমস্যা থাকে না।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বাঁধ কাটার পক্ষে সিধান্ত হয়েছিল কিন্তু কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি তিনি পরিদর্শণ করে ব্যবস্থা নিবেন।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব বলেন, সুবন্ধি এলাকা পরিদর্শণ করেছি। ওই সময়ে বেশ কিছু মানুষ বাঁধ কাটার পক্ষে বিক্ষোভ করেছে। তবে অধিদপ্তরের কারিগড়ি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর