ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
অস্বাভাবিক চড়া দামের জন্য দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে মৌসুমী ফল চায়না থ্রি জাতের লিচু। ফলে চায়না থ্রি জাতের লিচু কেনার আশা বাদ দিয়ে বোম্বাই জাতের লিচু দিয়েই লিচুর স্বাদ মিটাতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে।
জানা যায়, মৌসুমের শুরম্নতে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের জন্য লিচুর গুটি ঝলসে যাওয়াসহ আকস্মিক ঝড়ে এলাকার বেশির ভাগ বাগানের লিচু ঝড়ে পড়েছে। এতে আশানুরূপ উৎপাদন পাননি লিচু চাষিরা। লিচুর উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর লিচুর বাজার চড়া বলে দাবি করছেন স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ীরা। পার্শ্ববর্তী আমতলী এলাকার লিচু চাষি মো. বাবলু মেম্বার বলেন, প্রকৃতির দুর্যোগের জন্য লিচু বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ কারণে লিচুর ফলন অনেক কমে যাওয়ায় বাগান থেকেই লিচু জাত ভেদে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও বাগান মালিকরা আর্থিক লোকসানে রয়েছেন।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড় এলাকার লিচু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লিচু ব্যবসায়ীরা খাঁচায় খাঁচায় লিচু নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার তেমন দেখা মিলছে না। হতাশা আর লোকসানের শঙ্কা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। রিকশা ভ্যানে লিচু সাজিয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় লিচু বিক্রেতা উপজেলার আলদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর ইসমেতা মাঠ এলাকার বাসিন্দা বাবু ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে পার্শ্ববর্তী আমতলী এলাকার বাগান থেকে বোম্বাই লিচু কিনে এসে পৌর শহরে ফেরি করে বিক্রি করেন। বর্তমানে ১০০ লিচু ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অপর লিচু বিক্রেতা সারওয়ার্দী আলম ও সাইদুল ইসলাম বলেন, একই এলাকার বাগান থেকে তারাও বোম্বাই লিচু কিনে এনে বিক্রি করছেন তবে তাদের লিচু আকার বড় এবং বিচি ছোট হওয়ায় তারা ১০০ লিচু আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাগান থেকেই বেশি দামে লিচু কিনতে হওয়ায় পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভ ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দ্রম্নত বিক্রি করতে না পারলে পচন ধরবে এতে আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। এরপরও ক্রেতার অভাব রয়েছে। একই এলাকার নারী লিচু বিক্রেতা রানী আক্তার বলেন, লিচুর মৌসুম দ্রম্নত শেষ হয়ে যাচ্ছে, এরপরও আশানুরম্নপ লিচু বিক্রি হচ্ছে না। তারা দুইজন দেড় হাজার করে বোম্বাই লিচু বাগান থেকে এনে বিক্রি করছেন। তারা দাম রেখেছেন ১০০ লিচুর জন্য ৩৫০ টাকা। এ দামে লিচু করতে পারলে কিছু লাভ হবে, তবে পড়ে থাকলে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বেন। এ জন্য মজুদ লিচু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
অপর বেদনা লিচু বিক্রেতা অসাদুল ইসলাম বলেন, কয়দিন আগে ১০০ লিচু চায়না থ্রি জাতের লিচু ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন চায়না থ্রি জাতের লিচু বাগানে না থাকায় বেদেনা জাতের লিচু বিক্রি করছেন। তবে বোম্বাই লিচুর চেয়ে এর দাম বেশি। এটি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৭৫ টাকা দরে। এরপরও ক্রেতা নেই। যেটুকু লিচু বেচাবিক্রি হচ্ছে তার সবটাই বোম্বাই জাতের লিচুতে ইচ্ছে। কারণ চায়না থ্রি এবং বেদেনা জাতের লিচুর চেয়ে বোম্বাই জাতের লিচুর দাম অনেক কম। এ কারণে কমবেশি সব শ্রেণির মানুষই বোম্বাই জাতের লিচুই কিনছেন। লিচু কিনতে আসা আসাদুজ্জামান সুইট বলেন, কয়দিন আগে লিচু কিনতে এসে চায়না থ্রি জাতের ১০০ লিচুর দাম এক হাজার ৪০০ টাকা শুনে শূন্য হাতে বাড়ী ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। আজ (বুধবার) এসে ৩২০ টাকা দরে বোম্বাই জাতের ১৫০ টি লিচু নিয়ে বাড়ী ফিরছেন। লিচু কিনতে আসা রিকশা চালক হাফিজুর রহমান বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের চাল-ডাল কিনে বেশি দামে লিচু কেনা সম্ভব না। এজন্য এতোদিন লিচু কেনা হয়নি। এখন বোম্বাই লিচুর দাম একটু কমে যাওয়ায় ২৫ টি লিচু কিনেছেন ছেলেমেয়েদের জন্য। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রম্নম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় ৬৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রত্যেক বাগানেই কমবেশি লিচু উৎপাদন হয়েছে। তবে কত লিচু উৎপাদন হয়েছে তা এই মুহুর্তে দেওয়া যাচ্ছে না, তবে কিছুদিন পর বলা যাবে উপজেলায় কি পরিমাণ লিচু উৎপাদন হয়েছে।
এসিজি/এমআর