ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় কোরবানির পশু প্রস্তুতে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় খামারিরা। তবে গোখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। প্রান্তিক এসব খামারির দাবি, গোখাদ্যের এমন উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়ছে এবারের কোরবানির হাটে।
স্থানীয় খামারি, গরু ব্যবসায়ী ও পালনকারীরা বলছেন, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম বাড়তে বাড়তে তা নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর ওপর কোরবানির হাটকে সামনে রেখে এ দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। এর কারণে এবার গরুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুরের আমিন এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘কোরবানির হাটকে সামনে রেখে খামারে বিভিন্ন জাতের শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। একেকটির আকার ভেদে ৬০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে। অন্য বছরগুলোয় এ সময়ে খামার এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারীরা খুব কম আসছেন। শুনেছেন, এবার গরম্ন পালন (উৎপাদন) হয়েছে বেশি। তারপরও বেশি দামে গোখাদ্য খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কি না, চিন্তায় রয়েছেন।’
চিন্তিত গরম্নর মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। কোরবানির হাটকে সামনে রেখে প্রায় ২০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করে আসছেন ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় তুলনামূলকভাবে গরুর সংখ্যা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালনের খরচ অনেকাংশে বেড়েছে। তাই কোরবানির লাভ করা নিয়ে ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর ১০টি গরু কিনে ঢাকার বিভিন্ন কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার বাজার অনিশ্চিত এবং গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মাত্র ৫ থেকে ৭টি গরু কিনে ঢাকায় পাঠানোর কথা ভাবছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় এবার কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা ২০ হাজার ১০৫টি। কিন্তু উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৭ হাজার ২১২টি। ফলে উপজেলায় চাহিদার চেয়ে ২ হাজার ৮৯৩ টি পশু বেশি রয়েছে। এতে ষাঁড় রয়েছে ৮ হাজার ৫১১ টি, বলদ ১ হাজার ৯৮ টি, গাভি ১ হাজার ৮৩৫টি, মহিষ ১২টি, ছাগল ৮ হাজার ১২৩ টি ও ভেড়া ৫২৬ টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার উপজেলাটিতে কোরবানি উপযোগী মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ২০ হাজার ১০৫টি। উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ১৭হাজার ২১২টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ২০ হাজার ১০৫টি। অর্থাৎ ২ হাজার ৮৯৩টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে।
গত বছরগুলোর তুলনায় ফুলবাড়ীতে এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ২১২টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ২০ হাজার ১০৫টি। অর্থাৎ ২হাজার ৮৯৩টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে। চড়া গোখাদ্যের কারণে এবার খামারিদের গবাদিপশু পালনে ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই উপযুক্ত দাম না পেলে খামারিদের লোকসান হবে।’
এদিকে ফুলবাড়ী ও এর আশপাশের পশুর হাটগুলোয় কোরবানির আগেই তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও গরম্নর ব্যাপারীরা। তাদের মধ্যে অনেক ব্যাপারী উপজেলার বাড়ী বাড়ী ঘুরে গরু কিনতে শুরু করেছেন। তারা পশুর হাটগুলো থেকেও গরম্ন কিনছেন। মৌসুমি ব্যাপারীরা এসব গরম্ন কিনছেন মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রির আশায়।
সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় পশুর হাট বলে পরিচিত ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী আমবাড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম এবং দামও কিছুটা চড়া। হাটে থাকা গরুর ব্যাপারী ও হাট কমিটির সদস্যরা জানান, গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে এবার খামারিদের গরু পালনের খরচ অনেক বেড়েছে। এ কারণে হাটে গরম্ন এনে পালনকারীরা বেশি দাম চাইছেন। আবার বেশির ভাগ খামারি ও গরু পালনকারী কোরবানির সময় দাম আরও বাড়তে পারে এ ধারণা করে হাটে এখনই কোনো গরম্ন আনছেন না। তাই হাটে গরুর আমদানি কম।
এসিজি/এমআর