গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনোত্তর মোটর সাইকেল প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হারিছুর রহমানের কর্মী-সমর্থকরা হামলা ও তান্ডব চালিয়ে কাপ-পিরিচ প্রতীকের বিজয়ী ছেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনির হোসেন মিয়ার কর্মী-সমথকদের ১০টি বসতঘর, ৪টি মোটর সাইকেল, ২টি মিনি ট্রাক ও ১টি ট্রলি ব্যাপক ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট করেছে। এ সময় বাড়ির ৫ নারীসহ ১০ জনকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত নয়টার দিকে গৌরনদী পৌরসভার দিয়াসুর এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র (২) ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ ইখতিয়ার হোসেন হাওলাদারের নিজ ও পৈতৃক বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একইরাতে হামলাকারীরা কাপপিরিচ প্রতীকের কর্মী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মল্লিক খোকনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। অপর দিকে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় কাপপিরিচ প্রতীকের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রর্থীর কর্মী -সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতায় মোটর সাইকেল প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক কর্মী দোকানঘর দখল ও প্যানেল মেয়রসহ ১০ কর্মীকে পিটিয়ে কুপিয়ে আত করেছে। এদিকে পরাজিত এক নারী ভাইস চেয়ারম্যানের বাঁাঁশ ও পলিথিনের তৈরি লাকড়ির ঘরে রহস্যজনক অগ্নিসংযোরেগ ঘটনা ঘটেছে। গুরুত্বর আহত আমিনুল ইসলামকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দিয়াসুর বাংলাবাজার এলাকার টুকু মল্লিক ও তার ছেলে মিরাজ মল্লিককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার জেরধরে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছের আড়াই শতাধিক কর্মী সমর্থকরা লাঠিসোটা ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে সুসজ্জিত হয়ে রোববার রাত ৯টার দিাকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মনিরের কর্মী পৌর কাউন্সিলর ইখতিয়ার হোসেন হাওলাদারের নিজ ও পৈতৃক বাড়িতে হামলা ও তান্ডব চালিয়ে পৌর কাউন্সিলর ইখতিয়ার হাওলাদার, আবুল খায়েরর, দেলোয়ার হাওলাদারের পাকা ভবনের জানালার গ্লাস ও জাফর হাওলাদার, আনিস হাওলাদার, হারুন হাওলাদার, বাবাুল হাওলাদার, মনির হাওলাদার, লালমিয়া হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদারের বসতঘর ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর এবং ঘরের মালামাল লুটপাট করেছে। এ সময় হামলাকারীরা ৪টি মোটর সাইকেল, ২টি মিনি ট্রাক, ১টি ট্রলি ভাংচুর ও আকিজ কোম্পানির ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম, পলি বক্তিয়ার, ইখতিয়ারের স্ত্রী আখি আক্তার, কন্যা সাফিন খানম, ভাই সুজন হাওলাদারসহ ১০ জনকে কুপিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। একইদিন সন্ধ্যায় আশোকাঠি এলাকার মোল্লাবাড়ি নামকস্থানে বসে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেনের ভাতিজা সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম আহাদ মিয়া রাসেলকে মারধর করে পরাজিত মোটর সাইকেল প্রতীকের কর্মী দেলোয়ার হাওলাদার ও সজিব হোসেন জিয়া।
বিজয়ী কাপ পিরিচ প্রতীকের কতিপয় কর্মীরা রোববার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলা গেটে বসে মোটর সাইকেল আরোহী মোটর সাইকেল প্রতীকের কর্মী প্যানেল মেয়র আতিকুর রহমান শামীম, পৌরসভার স্টাফ সাকিল সরদার ও নবীন শরীফকে পিটিয়ে আহত করেছে। বার্থী ইউপির সদস্য করিম লস্করের বার্থী বাজারের দোকান ঘর দখল করার অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী কাপ পিরিচ প্রতীকের কর্মী ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাফর প্যাদার বিরুদ্ধে। ফুটবল প্রতীকের পরাজিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক শিপ্রা রানী বিশ^াসের বার্থী গ্রামের বাড়িতে বাঁশ, পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে নির্মিত লাকড়ির ঘরে রহস্য জনক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছের কর্মী কাছেমাবাদ গ্রামের মৃদুল সরদার, শরিকল গ্রামের টিপু মৃধা ও ছাত্রলীগ নেতা মহিবুল, কান্ডপাশা গ্রামের মিলন ও ছাত্রলীগ নেতা উজ্জল, কুড়িরচর গ্রামের মফছের ফকির, মোল্লাবাড়ি এলাকার শাহাদাত বেপারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রাথী মনিরের কর্মী সমর্থকরা।
হামলা ভাংচুরের খবরপেয়ে রাতেই পৌর কাউন্সিলরের বাড়িতে ছুটে যান নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মনির হোসেন, সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসী হারিছুর রহমানসহ তার ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। বিজয়ী চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিয়া বলেন, ভোটে পরাজিত হয়েই হারিছুর রহমান আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে বসতবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করছে। তাই অনতিবিলম্বে হারিছকে গ্রেপ্তার করা না হলে গৌরনদীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান বলেন, মোটর সাইকেল প্রতীকের কর্মী টুকু মল্লিক ও তার ছেলে মিরাজ মল্লিককে কুপিয়ে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার জেরধরে তাদের আত্মীয় স্বজনরা ইখতিয়ারের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। বিজয়ী প্রার্থীর কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে মোটর সাইকেল প্রতীকের ১০/১৫ কর্মীকে কুপিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
অপরদিকে হামলা ও ভাংচুরের খবরপেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন থানা পুলিশসহ নির্বাচনের টহলে থাকা র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।
গৌরনদী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনোত্তর হামলার ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএসআর/এমআর