নেছারাবাদ (পিরোজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নেছারাবাদে ঘুর্নিঝড় রিমালে অশ্রয় নেওয়া ডুবি আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরিবারগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সহকারি মৌলভী সাইদুর রহমান সাইদের বিরুদ্ধে। ঘূর্নিঝড়ের দিনে ওই মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়া ৬০টি পরিবারকে দুর্ব্যবহার করে ঝড়ের পরের দিন সকালে মাদরাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। আশ্রয় নেয়া এলাকার মানুষের মধ্য ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থাণীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তারা মাওলানা সাইদুর রহমানের বিচার দাবি করেন। ঘটনাটি ঘটেছে নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ডুবি আলিম মাদ্রাসায়।
স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার কেহই ওই হতদরিদ্র পরিবারগুলোর পাশে দাড়াননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদ এখনো জানেন না কার কার ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, অনেকের ঘরের নিচ থেকে ভিটির মাটি সরেগেছে। ত্রান নিয়ে ইউএনও মনিরুজ্জামান ওই অশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ত্রান নিয়ে ফিরে গেছেন। বৃহস্পতিবার এ খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই শিক্ষককে মাদ্রাসায় আটক রাখলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে এসব কথা জানাযায়।
মাদ্রাসার আশ্রয় নেয়া লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ২৬ মে (রোববার) রাতে ঝড়, বাতাস, মুষলধারে বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৬০টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসেন ডুবি আলিম মাদরাসায়। সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে বিকেলের মধ্য গোটা উপজেলার নি¤œ অঞ্চলের শত শত বাড়ী ঘরে ছয় থেকে আট ফুট পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। ঘরের উপরে গাছ পড়ে ধ্বংশ হয়ে পড়ে শতাধিক ঘর বাড়ী। মঙ্গলবার সকালে বন্যা থেমে পানি সরে গেলেও বন্যায় মাদরাসায় আশ্রয় নেয়া অনেকের বাড়ী ঘরে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। তাই তারা দুইটা দিন ওই আশ্রয়নে থাকতে চেয়েছিলেন। (২৮ মে) মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী মাওলানা সাইদুর রহমান সাইদ তাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও গালিগালাজ করে মাদরাসা থেকে তাড়িয়ে দেন।
ভুক্তভোগী নেহারুন অভিযোগ করেন, বন্যায় তিনি ডুবি মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। বন্যায় ঘরের উপরে গাছ পড়ে ঘর ধুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। পানিতে ঘরের মাটি ধুয়ে গেছে। থাকার কোন জায়গা নেই। তাই আর একটা দিন তিনি ওই মাদ্রাসায় রাত্রি যাপন করতে চেয়েছিলেন। মাদরাসার মাওলানা সাইদ গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওই আশ্রয়নে আশ্রয় নেয়া মাহিনূর নামে অপর এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, বন্যায় আমাদের ঘর বাড়ী সব শেষ। ঘরে থাকার মত কোন জায়গা নেই। তাই মাওলানা সাইদের হাতে পায়ে ধরে মাদ্রাসার ভবনে দুইটা দিন থাকতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি বন্যার রাতে আশ্রয়নের বাথরুমে তালা দিয়ে রেখেছেন। আমরা নিরুপায় হয়ে সেই তালা ভেঙ্গে বাথরুম ব্যবহার করায় আমাদের যা ইচ্ছে তা বলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাওলানা সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, চেয়ারম্যান বিষয়টা মিমাংসা করে দিয়েছেন। তারা যে অভিযোগটা করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মাত্র দুইজন লোক ছিলো আমি তাদের কে চলে যেতে বলেছি।
মাদ্রাসা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এইচ এম মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি গতকালকে শুনেছি সাইদ মৌলভী যে কাজটি করেছে এটা দুঃখ জনক। ঝড়ের সময় তাদেরকে চলে যেতে বলাটা উচিত হয়নি। আমাকে জানালে আমি তাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতাম। আমারা কমিটির লোকজন বসে বিষয়টি দেখবো।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ওই মৌলভী আশ্রয়নের লোকের সাথে নাকি বাজে ব্যবহার করেছেন। আমি মৌলভীকে মন্দ বলেছি এবং তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো: মনিরুজ্জামান জানান, আমি বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।
আরএ/এমআর