জাহিদ রিপন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) অফিস॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত, উন্নত একটি দেশ গড়তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। উন্নত একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ছিলেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।’ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্নিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার যোগে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সরকারী মোজার উদ্দিন বিশ^াস ডিগ্রি কলেজ মাঠের জনসভাস্থলে এসে পৌছান। দীর্ঘ এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে এলাকায় ছিল সাজ সাজ রব আর আনন্দ উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য, তার কথা শোনার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল সহকারে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা দলে দলে আসতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে আসার আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠে সরকারী মোজার উদ্দিন বিশ^াস ডিগ্রি কলেজ মাঠ। আশেপাশের ভবন ছাড়াও উঁচু গাছে উঠে প্রধানমন্ত্রীর ভাষন শোনছি অনেক মানুষ।
ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’শুরু থেকে সরকার ছিল তৎপর। ফলে এত বড় জলোচ্ছাস আর দীর্ঘ সময় ধরে ঘূর্নিঝড়ের তান্ডবে যে ভয়ানক ক্ষতির শংকা ছিল তার থেকে কম হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ভেংগে যাওয়া রাস্তাঘাট পুন:র্নিমানের কাজ শুরু করেছি। ভেংগে যাওয়া বেরিবাঁধ র্নিমানের কাজ শুরু করেছি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে ঘর র্নিমান সামগ্রী পৌছে দিয়েছে। খাবার পৌছে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ’দুর্যোগ বাংলাদেশের নিত্য সংগী। এ অঞ্চলের মানুষ দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে জীবন-জিবীকা টিকিয়ে রেখেছে। দুর্যোগ প্রতিরোধে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দুর্যোগ সহনশীল উন্নয়ন পরিকল্পনা করছে।’
কলাপাড়া উন্নয়নের কথা তুলে দরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’দক্ষিনাঞ্চল ছিল অবহেলিত। সরকার গঠনের পর দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নে হাত দিয়েছি। এখানে গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা র্নিমান করেছি। ১৩২০ মেঘাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র র্নিমান করেছি। ত্রিমাত্রিক শক্তির শেরে-বাংলা নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করেছি। ইপিজেড র্নিমানের কাজ চলছে। কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছি। এসব উন্নয়ন কাজে ক্ষতিগ্রস্থদের আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছি। আমি ঘুর দেখেছি দুর্যোগে এসব ঘরের কোন ক্ষতি হয়নি।’
কলাপাড়ায় আসায় অতীত স্মৃতিচারন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ কুয়াকাটা যেতে ভোগান্তির শেষ ছিলনা। নদী পারাপারের কারনে অনেক সময় যাওয়া যেতনা। বরিশাল থেকে কলাপাড়ায় আসার পথে সকল নদীর উপড় ৫টি সেতু র্নিমান করেছি। এখন বরিশাল থেকে কলাপাড়া আসতে মাত্র ২ ঘন্টা লাগে। পদ্মা সেতু র্নিমানের ফলে দক্ষিনাঞ্চলের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। ঢাকা থেকে এখন ৫ ঘন্টায় কলারপাড়া আসা যায়।’
কৃষি উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত চাষ পদ্ধতি, কৃষি প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন বীজের কারনে কৃষিতে অসামান্য উন্নয়ন ঘটেছে। কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হয়ে। কৃষির উন্নয়ন ঘটলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে। আপনারা ওয়াদা করেন কোন জমি অনাবাদী রাখবেন না।’
যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রদানমন্ত্রী বলেন, চাকুরীর জন্য না ঘুরে নিজে উদ্যোগী হতে হবে। নিজেকে উদ্যক্তা হিসাবে তৈরি করতে হবে। নিজ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমানে নিজের অবদান রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ছিল, অব্যাহত থাকবে।’
সংক্ষিপ্ত জনসভার সংক্ষিপ্ত ভাষনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেত জনতার উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ’রোদ আর তীব্র গরমে আপনাদের আর কস্ট দিতে চাইনা। আপনারা কস্ট সহ্য করে আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুধু এটুকু বলতে চাই, রিক্ত আমি, নি:স্ব আমি দেবার কিছু নাই। আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়ির সহ-সভাপতি র্নিমল নন্দীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রানমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান এমপি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক এমপি, সাবেক চীফ হুইপ, পটুয়াখালী-২ আসনের সাংসদ আসম ফিরোজ, কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পদক আফজাল হোসেন, কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হাওলাদারসহ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী বেলা আড়াইটায় ১৩২০ মেঘাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে ঢাকায় পিরে যাবেন।
জেআর/এমআর