বরিশাল সাগরকন্যা অফিস॥
খাস জমির দখলদার ৩১ জনের নাম প্রকাশ করেছে ভূমিহীনদের সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন। ওই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নাম। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১২৩ একর খাস জমি জবর দখলের অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র, ভূমি মন্ত্রণালয়, সচিবলায়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছেন ওই সংগঠনের জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা। স্মারকলিপিতে দখলকৃত খাস জমি উদ্ধার পরবর্তী প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে সুষ্ঠু বন্টনের দাবী করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নদীর চর ও সরকারী খাস জমি কতিপয় প্রভাবশালী অবৈধভাবে দখল করে শিল্প কারখানা, মিল ইন্ডাষ্ট্রিজ, ইটভটা, ডকইয়ার্ড, সীমানা প্রাচীর, বহুতল ভবন, বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে। সূত্রমতে, নগরীর রূপাতলীর দপদপিয়ার সাবেক ফেরিঘাটের পশ্চিম-উত্তর পাশে প্রান কোম্পানি ১০ একর, একই এলাকার পশ্চিম পাশে অপসোনিন ক্যামিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ ১৫ একর, উত্তর পাশে থাকা এ্যাংকর সিমেন্ট কোম্পানি পাঁচ একর, নগরীর চাঁদমারী খালের দক্ষিণ পার্শ্বের খাল ও চরের পাঁচ একর ও নামার চরে মোঃ শামসুল হক মিয়া নামের এক জনৈক ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মানসহ দুই একর জমি, কেডিসি বালুর মাঠ বস্তি, কর্ণকাঠী নদীর তীরে ইটের ভাটা, মোহাম্মদপুর চরে ডক ইয়ার্ড নির্মানের মাধ্যমে পাঁচ একর জমি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে বিসিসি’র সাবেক কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। এ
ছাড়া রসুলপুরে ৮০ শতক খাস জমি দখল করে ২০টি ভিটি বিক্রি, একই এলাকায় খাস জমিতে একশ’ ঘর তুলে তা বিক্রি ও ভাড়া বাণিজ্যের অভিযোগ করা হয়েছে বশির আহমেদ নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নগরীর ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন-অর রশিদের বিরুদ্ধে ৬০ শতক জমিতে ৪১টি ও কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক একর জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর করে ১০০টি ফ্লাট বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। তাছাড়া ব্যবসায়ী এমরাজ হোসেন, খান হাবিব, শ্রমিক লীগ নেতা পরিমল চন্দ্র, সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন নোমানের বিরুদ্ধে পোর্ট রোডসহ বিভিন্নস্থানে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমি দখল, মোহাম্মদপুর চরে এমইপি এনার্জি সেভিংস ল্যাম্পস কোম্পানীর বিরুদ্ধে ১০ একর, একইস্থানে মৌসুমী খামার কোম্পানীর নামে আরও তিন একর, বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন কলেজের অধ্যাপক আবুল কালামের বিরুদ্ধে এক একর ৫০ শতক, মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী লাল মিয়া ও পলাশপুরে সাবেক কাউন্সিলর মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০ একর ও চরমোনাই পীরের ভাইয়ের বিরুদ্ধে খোন্নারের চরে পাঁচ একর, চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাঁচ একরসহ মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে ১২৩ একর জমি বিভিন্নভাবে দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রভাবশালী দখলদারদের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ভূমি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী হতদরিদ্র প্রকৃত ভূমিহীন কৃষক-কিষানী পরিবারের মাঝে বরাদ্দের দাবী করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও বরিশাল জেলার সভাপতি মোঃ হারুন ভান্ডারী বলেন, যে জমি ও দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার দলিল-পর্চাসহ পর্যাপ্ত প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে। খাস জমি সঠিক ভূমিহীনদের মাঝে বন্দবস্তের জন্য অনেক আগ থেকেই আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। এসব করতে গিয়ে আমরা অবৈধ দখলদারদের তালিকা খুঁজে পাই। অতিসম্প্রতি তা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
ভূমিদস্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে মানববন্ধন, ঝাড়ুমিছিল: বরিশালে গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমজুরদের সহায় সম্পত্তি দখল করার জন্য একের পর এক মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানীকারী ভূমিদস্যু হাকিম হাওলাদারের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধন ও ঝাড়- মিছিল করেছে ভূক্তভোগী গ্রামবাসী। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত শাহাজিরা গ্রামের। উপজেলার বাটাজোড়-সরিকল সড়কের শাহাজিরা এলাকায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে ঝাড়- মিছিল বের করা হয়। মানববন্ধন চলাকালীন সময় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভূক্তভোগী পলাশ খলিফা, কামরুল ইসলাম, শাহিনুর বেগম, নুপুর বেগম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, তারা তাদের পৈত্রিক ও ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছেন। অতিসম্প্রতি তাদের জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পরে একই গ্রামের মৃত হাতেম আলী হাওলাদারের পুত্র হাকিম হাওলাদারের। বক্তারা আরও বলেন, জোরপূর্বক তাদের সহয় সম্পত্তি দখল করে নেয়ার জন্য হাকিম হাওলাদার গত ফেব্রুয়ারী মাসে গৌরনদী মডেল থানায় বোমা বিস্ফোরনের একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ তদন্ত করে বোমা বিস্ফোরনের কোন আলামত না পাওয়ায় সেসময় থানায় মামলা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে হাকিম হাওলাদার আদালতে মামলা দায়ের করে গ্রামের নিরিহ জনসাধারণকে হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, হাকিম হাওলাদারের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার ও সরিকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা জানান, হাকিম হাওলাদার একজন ভূমিদস্যু প্রকৃতির লোক। অন্যের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন করাই তার কাজ। স্থানীয়ভাবে কোন সালিশ মীমাংসাই সে মানেনা। সরিকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা জানান, হাকিম হাওলাদারের নেশা ও পেশাই হলো গ্রামের দিনমজুর পরিবারগুলোর সহায় সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা। বেশ কিছুদিন পূর্বে কে বা কারা হাকিমের বাড়িতে বোমা ফাটিয়েছে। এনিয়ে তিনি (হাকিম) নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করেছে। চেয়ারম্যান আরও জানান, জমিজমা সংক্রান্ত কোন বিরোধ নিয়ে উভয়পক্ষ গ্রাম আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাকিম হাওলাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।