আমতলীতে ভুঁয়া খতিয়ান খুলে আদালতের ডিক্রি!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ভুঁয়া খতিয়ান খুলে আদালতের ডিক্রি!
বৃহস্পতিবার ● ৯ মে ২০২৪


আমতলীতে ভুঁয়া খতিয়ান খুলে আদালতের ডিক্রি!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ভুয়া খতিয়ান খুলে নিজেরা বাদী ও বিবাদী সেজে আদালতের ডিক্রি আদেশে আমতলী পৌর শহরের ১৪.৫৭ একর সরকারী জমি উকিল কমিশনের মাধ্যমে উচ্ছেদের আদেশ নেন একটি প্রভাবশালী মহল। বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিযুস চন্দ্র দে’র আবেদনের প্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা  যুগ্ম জজ আদাতের বিচারক আহমদ সাইদ উচ্ছেদ আদেশ স্থগিত করেছেন। উচ্ছেদ আদেশ স্থগিত হওয়ায় আমতলী পৌর শহরের পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও  আমতলী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা শাস্তি দাবী করেছেন।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের আমতলী মৌজার ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১, ১৯৫২ ও ১৯৫৪ নং ভুয়া সৃজিত খতিয়ানের ১৪.৫৭ একর সরকারী জমি রাজিয়া বেগম, সকিনা বেগম, মোকলেসুর রহমান, আব্দুর রহিমের নামে ভুয়া রেকর্ড করেন একটি চক্র। ওই জমির বিরুদ্ধে আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বোন ফিরোজা বেগম, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের স্ত্রী কল্পনা বেগম, আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধার ভাই আলাউদ্দিন মৃধা, বোন তহমিনা বেগম, ভুমি খেকো রাকিবুল ইসলাম ইউসুফ ও তার স্ত্রী ফাহমিদা বেগম বাদী হয়ে বরগুনা জেলা যুগ্ম জজ আদালতে রাজিয়া বেগম, সকিনা বেগম, মোকলেসুর রহমান, আব্দুর রহিমকে বিবাদী করে বন্ঠননামা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার বিবাদীরা  বাদীদের ছোলে মুলে জমি ছেড়ে দেন। পরস্পর যোগসাজসে সরকারী জমি আত্মসাৎ করতে বাদী ও বিবাদীগণ মামলা দায়ের করেছেন।  ২০২২ সালের ৫ জুলাই এ বন্ঠননামা মামলার রায় হয়।  ওই  রায়ের বলে বাদীরা ওই বছর ১৩ জুলাই প্রাথমিক ডিক্রি আদেশ নেন। পরে গত বছর ৬ মার্চ চুড়ান্ত ডিক্রির  আদেশ নেন। ওই ডিক্রির আদেশের বলে মামলার বাদীরা ১৪.৫৭ একর জমিতে বসবাসরত ঘর-বাড়ী ও দোকানপাট উচ্ছেদ করতে বরগুনা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক বৃহস্পতিবার জমিতে অবস্থানরত সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আদেশ দেন। এদিকে জমিতে বসবাসরত বাসিন্দারা আদালত থেকে উচ্ছেদ আদেশের নোটিশ পায়নি বলে জানান ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম, সুজন মৃধা, জাকির হোসেন, মনির আকন। বাড়ী-ঘর, দোকান পাট উচ্ছেদের খবর পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকুকে অবহিত করেন। পরে তিনি বরগুনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলামের নির্দেশে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসানকে সৃজিত খতিয়ার গুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। পরে তিনি (সহকারী কমিশনার) নথিপত্র ঘেটে দেখেন সৃজিত জমির খতিয়ান ও রেকর্ড ভুয়া। সৃজিত খতিয়ানে বিবাদীদের নামে কোন রেকর্ড নেই। পরে তিনি এ জমির বিষয়ে প্রতিবেদন দেন। বুধবার বরগুনা জেলা যুগ্ম জজ আদালতে-২ তে বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিযুস চন্দ্র দে ওই জমির উচ্ছেদ আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক আহমদ সাইদ নথি তলব করে ওইদিনই মৌখিক আদেশে উচ্ছেদ আদেশ স্থগিত করেন। বৃহস্পতিবার ওই আদাতের বিচারক নথি পর্যালোচনা করে পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জমিতে বসবসরত ঘর-বাড়ী, দোকান পাট উচ্ছেদ বন্ধের আদেশ দেন। এ খবর  আমতলীতে পৌছলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা এ জালিয়াতির চক্রের হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবী করেছেন।
ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম, সুজন মৃধা,  জাকির হোসেন, মনির আকন বলেন, আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবুর রহমান ও আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা জাল জালিয়াতি করে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নামে আমাদের বসবাসের জায়গাটুকু কেড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমরা রক্ষা পেয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবী করছেন তারা।
আমতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজমুল আহসান নান্নু বলেন, রক্ষক যদি হয় ভক্ষক তাহলে মানুষে যাবে কোথায়? মেয়র মতিয়ার রহমান তার ভাই মজিবুর রহমান ও মোতাহার উদ্দিন মৃধা চক্রান্ত করে তার স্বজনদের নামে আমতলী পৌর শহরের ১৪.৫৭ একর জমি দখল করতে সকল প্লান সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু, বরগুনা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই চেষ্টা ব্যহত হয়েছে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক জিএম ওসমানী হাসান বলেন, ভুমি দস্যূ মতিয়ার রহমান, তার ভাই মজিবুর রহমান ও মোতাহার উদ্দিন মৃধার জমি দখল করতে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, আমি এর সঙ্গে মোটেও জড়িত নই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী মহল সরকারী ১৪.৫৭ একর জমি নিজেরা বাদী ও বিবাদী সেজে ডিক্রি আদেশের মাধ্যমে দখল করতে চেয়েছিল কিন্তু প্রশাসনের চেষ্টায় তাদের সেই কৌশল সফল হয়নি। তিনি আরো বলেন, এ জাল জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৪:২৬ ● ৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ