তালতলীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল!

প্রথম পাতা » বরগুনা » তালতলীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল!
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪


তালতলীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পর এবার উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার রাতে এ ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এতে গোটা উপজেলার জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এখন তালতলী উপজেলার রাজনৈতিক নেতারা ভিডিও ভাইরাল আতঙ্কে রয়েছে। পরপর উপজেলার চার শীর্ষ নেতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। এতে দলের ভাবমুর্তি চরম ভাবে বিঘিœত হয়েছে বলে জানান সাধারণ নেতাকর্মীরা।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়া এক তরুনীর বিরুদ্ধে মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে গত ১২ এপ্রিল তালতলী থানার পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা দায়ের করেন। এতে ওই তরুনী এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরকে আসামী করা হয়। ওই মামলায় বরগুনা ডিবি পুলিশ ওই তরুনী ও তার সহযোগীকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করে। ওই মামলার দুই আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। ওই তরুনী জেল হাজতে যাওয়ার পরপরই তার সঙ্গে তালতলী উপজেলার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়। তাদের আপত্তিকর ভিডিও মানুষের মোবাইল ফোনে ফোনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতার এমন কর্মকান্ডে সামলোচনার ঝড় বইছে। এর রেশ কাটতে না কাটকেই শুক্রবার রাতে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ১৬ সেকেন্ডের আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপে তাকে ওই তরুনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ভিডিও প্রান্তিক মানুষের মোবাইল মোবাইলে। এ ভিডিও নিয়ে তারা ট্রল করছে।
উল্লেখ, তালতলী উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু ওই তরুনীর সঙ্গে ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে ফেইজ বুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে তারা এক পর্যায় প্রেমে জড়িয়ে পরে। প্রেমের সুবাদে ওই তরুনীকে মিঠু একাধিক বার ধর্ষণ করে। পরে তিনি গোপনে ওই তরুনী আপত্তিকর ভিডিও ধারন করে। ওই ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে মিঠু ওই তরুনীকে প্রথমে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ড. কামরুজ্জামান বাচ্চুর কাছে পাঠায় এবং তিনিও ওই তরুনীকে ধর্ষণ করেন। এরপর পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পাঠায় মিঠু। ওই  চেয়ারম্যানও তাকে ধর্ষণ করে এবং স্বেচ্ছায় ভিওিও ধারন করেন। এরপর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিঠু ওই তরুনীকে ভিডিও ক্লিপ ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের কাছে পাঠায়। তিনিও ওই তরুনীকে ধর্ষণ করেন। নিরুপায় হয়ে তাদের হাত থেকে রক্ষায় ওই তরুনী সুকৌশলে তাদের এমন কর্মকান্ডের ভিডিও ধারন করেন। পরে ওই ভিডিও ক্লিপ তিনি জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরের কাছে গচ্ছিত রাখেন। এমন দাবী তরুনীর নানার। কিন্তু ওই ছবি হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হয়। এতে বেকায়দায় পড়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা মিঠু, দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, রাজ্জাক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার। পরে তারা নিজেদের নিরাপদ রাখতে ওই তরুনীর বিরুদ্ধে ১২ এপ্রিল পর্নোগ্রাফি আইনে মামলার দায়ের করেন। কিন্তু তাদের সেই প্লান ভেস্তে যায়। একের পর এক বেড়িয়ে আসে ওই তরুনীর সঙ্গে ধারন করা ভিডিও।  ওই তরুনীর নানা আরো দাবী করে বলেন, আমার নানতির মায়ের সঙ্গে ওর বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় যখন ওর বয়স দুই বছর। এরপর বিভিন্ন চড়াই ওতড়াইয়ের মাধ্যমে আমার নাতনি বড় হয়েছে। গত ঈদের দুই দিন আগে  নাতনি আমার বাড়ীতে বেড়াতে আসে। তারপর ঈদের দিন দুপুর আড়াইটায় ডিবি পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ৮২ ঘন্টা পরে পুলিশ আমার নাতনিকে আদালতে সোপর্দ করেন। এতো সময় আমার নাতনি কোথায় ছিল কেউ জানেনা? এরও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, আমার প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এক তরুনীর এডিট ভিডিও দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা এমন ঘৃনিত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তালতলী থানার ওসি কাজী শহিদুল ইসলাম খাঁন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, সঠিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। তারাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৪:৫৬ ● ২৪৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ