চরফ্যাশনে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চরফ্যাশনে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার!
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪


চরফ্যাশনে যত্রতত্র অবৈধ ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সরকারি নীতিমালা অমান্য করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চরফ্যাশন শহরের কাপড়, মুদি সিলভারসহ ওষুধ ফার্মেসীতে পথোচারীদের যাতায়াতের পথরোধ করে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। এছাড়াও যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। মোড়ে মোড়ে রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অনুমোদন ছাড়াই বহু দোকানে এই ব্যবসা চলছে। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে সিলিন্ডার। এতে যে কোনো সময় দূর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও এবিষয়ে প্রশাসনের নেই কোনো পদক্ষেপ ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই ।
চরফ্যাশন পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শতকরা প্রায় এই উপজেলা ৬০শতাংশ মানুষের রান্না কাজে ভরসা এখন গ্যাস সিলিন্ডার। বাজারে ব্যাপক চাহিদা আর লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে চরফ্যাশন প্রতিনিয়ত বাড়ছে সিলিন্ডার এলপি গ্যাসের ব্যবসা। বর্তমানে চায়ের দোকানে, ওষুধের দোকানে, কসমেটিক ও ভ্যারাইটিজ ষ্টোরে, কাপড়ের দোকানে, লাইব্রেরীতে, মুদিখানায়, এমনকি চাউলের দোকানেও এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে অবাধে। যার ফলে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণ ও মারাতœক দূর্ঘটনায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে জনজীবন।
উপজেলার শহর বাজার ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন শতাধিক বিভিন্ন প্রকার দোকানে দেদারে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। অথচ এ উপজেলায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেয়া আছে কয়েকজন ব্যবসায়ী। গত এক বছরে উপজেলায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন ।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন হাট, বাজার ছাড়াও অলি-গলিতে সর্বত্র এখন পাওয়া যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে মুদি মালের মত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চরফ্যাশনের যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনা বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ দোকানেই লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার। দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়াই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হলেও এখন পর্যন্ত এব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বিক্রি রোধে এখন দেশব্যাপী ডিএনসিআরপি অভিযান শুরু করলেও অদৃশ্য কারণে চরফ্যাশনে কোনো অভিযান পরিচালনা না করায় অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বাড়ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় একজন আইনজীবি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদন্ড, অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রি করতে বিস্ফোরক লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। ছোট লাইসেন্সধারী কোনো দোকানি ২০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করতে পারে না। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে হলে একজন ব্যবসায়ীকে সরকারি বিধি মোতাবেক কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই এলপি গ্যাস বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না।
লাইসেন্সধারী এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা জননী ট্রেডার্সের মালিক মোশারফ হোসেন জানান, অধিকাংশই লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ব্যবসার প্রসার ঘটছে। দোকানদাররা বেশিরভাগই বিস্ফোরক লাইসেন্স নেননি। তা ছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মঙ্গলেরগাঁও বটতলা বাজারের একটি দোকানে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করছেন জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। দোকানের বাহিরে রাস্তায় রোদের মধ্যে ফেলে তিনি গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করছেন। হোসেনপুর গামী সড়কের পাশেই একটি কসমেটিক দোকানে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন বাবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় জমজমাটভাবেই এব্যবসা করেন তিনি। এ ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈধভাবেই ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই এ ব্যবসা করছেন তিনি। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না এবং ডিলারও তাকে অবহিত করেননি। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে।
চরফ্যাশন উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ম্যানেজান সাঈদ হোসেন বলেন, লাইসেন্স ছাড়া যারা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছে তাদের আমরা দ্রুত লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া ডিলারদেরও খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্স দেখে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক জানান, বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া এলপি গ্যাস সিলিন্ডার যারা বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৪:৩৬ ● ৯৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ