টুঙ্গিপাড়ায় শিশু সমাবেশআমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই-প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » টুঙ্গিপাড়ায় শিশু সমাবেশআমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই-প্রধানমন্ত্রী
রবিবার ● ১৭ মার্চ ২০২৪


টুঙ্গিপাড়ায় শিশু সমাবেশ -  আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই-প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

প্রধানমন্ত্রী  ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের প্রতি জাতির পিতার সবসময় নজর ছিল। যারা দুঃস্থ শিশু, অসহায় অথবা এতিম তাদের জন্য তিনি শিশু প্রোটেকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকে বিশ^ব্যাপি আমরা দেখি অনেকে শিশু অধিকারের কথা বলেন।শিশু শিক্ষা ও মানবধিকারের কথা বলে সোচ্চার। আর পাশপাশি আমরা দেখি গাাঁজায় শিশুদের উপর যখন বোমা ফেলা হয়, হত্যা করা হয়, হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়, ফিলিস্তিনিদের উপর যখন আক্রমণ করা হয়-আমি জানিনা ওইসব মানবধিকার সংস্থাগুলো কোথায় থাকে। তাদের সেই মানবধিকতা বোধ কোথায় থাকে আমার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা। আমরা শান্তি চাই। কারন ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা আমরা দেখেছি।আমরা সবসময় নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। তাইতো আমার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অসহায় শিশুরা বিধ্বস্ত অবস্থায় আশ্রয় চাইলো, আমরা মানবিক কারনে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আজকে গাঁজায় শিশু ও নারীদের যে অবস্থা হয়েছে আমি জানিনা বিশ^বিবেক কেন নাড়া দেয়না।
রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায়  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জম্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ প্রাঙ্গনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এদিনটিকে আমরা শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। এদিন বিশে^র সকল শিশুর প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে পরম শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। একটি দেশ দিয়েছেন।আত্ম পরিচয়ের সুযোগ দিয়েছেন। শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতা। ৩০ লাখ শহীদ ও নির্যাতিত মা- বোনদের। মুক্তিযোদ্ধা মা-বোনদের স্বশ্রদ্ধেয় সালাম জানাই।
তিনি আরো বলেন, অত্যান্ত বেদনার সাথে স্মরণ করি  ১৫’আগস্ট যেদিন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার মা, আমার ছোট ৩ ভাই একইসাথে আত্মীয় পরিবার পরিজনকে। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।জাতির পিতা এদেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে এসব করেছিলেন, যাতে মানুষ উন্নত জীবন পায়।
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন, দর্শন ও রাজনীতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান নামে দেশটির সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে সেই ৪৮ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত  বঙ্গবন্ধু বারবার কারা বরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছিল। আর সে বিজযের পথ ধরে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। ৭৫’র ১৫-ই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সকল সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল, নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ৩ বছর ৭ মাস  সময় পেয়েছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সল্প সময়ের শাসনকালে আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়ে দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে এদেশের মানুষের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করা, নারী শিক্ষার সুযোগ, নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসন থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাই তিনি করেছিলেন।
আজকে আমরা পল্লী বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে যা কিছুই করি সবকিছুর ভিত্তি তিনি করে দিয়ে গেছেন। তিনি শিশুদের সুরক্ষার জন্য শিশু আইন তৈরী করে গেছেন। শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও তিনি করে যান। শিশুরা যাতে অবহেলিত না থাকে। অত্যান্ত দুঃখের বিষয় জাতির পিতার যে আকাঙ্খা ছিল দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন, যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে তিনি দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় ১৫ই আগস্ট আঘাত হানে। এরপর বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যত কোন সম্ভবনাই ছিলনা।
জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জের মালেকা অ্যাকাডেমির তৃতীয় শ্রেনীয় শিশু শিক্ষার্থী তিয়াশা জামিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
শিশু প্রতিনিধির বক্তব্য রাখেন, মালেকা অ্যাকাডেমির ৩ য় শ্রেনীর ছাত্রী তাইয়্যেবা তাসনিম।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে  বলেন, শিশুকাল থেকেই নিজেকে এদেশের মানুষের ক্ষুধা পিড়ীত, কংকালসার অবস্থা, পরনের কিছু ছিলনা, পেটে খাবার নেই, রোগের চিকিৎসা নেই এবং যা থাকে ব্যাথিত করতো। ছোট বেলা থেকে তিনি যারা একেবারে গরীব অসহায় ছাত্র-ছাত্রী তাদের সাহয্য করতেন। আমি দাদীর কাছে গল্প শুনেছি, তিনি তার স্কুলের সাথীদের বই খাতা এবং দূর এলাকা থেকে রোদের মধ্যে খারাপ পথ মাড়িয়ে স্কুলে আসা ছাত্রদের নিজের ছাতাটাও দিয়ে দিতেন। এমনকি নিজের পরনের কাপড় চোপড় ও দিয়ে দিতেন। খুব সৌভাগ্য ছিল তার।বাবা-মা তাকে একারনে কোন বকাঝকা ও অনুৎসায়িত করতেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জম্মগ্রহন করেন। টুঙ্গিপাড়া তখন ঢাকার রাজধানি থেকে অনেক দূরে। বাইশ থেকে চব্বিশ ঘন্টা সময় লাগতো আসতে। এই মাটিতে তিনি ঘুমিয়ে আছেন বাবা-মায়ের কবরের পাশে। আজকে এখানে আমরা জাতীয় শিশু দিবস পালন করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত। তবে আমরা একটা জিনিসই চাই-আমরা এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আসি, এ লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করব। একসময় সমগ্র উপমহাদেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়।দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময়।ওই সময় তিনি নিজের গোলার ধান বের করে দরিদ্রদের দিয়ে ছিলেন। এভাবে মানুষের প্রতি তার একটা আলাদা দায়িত্ববোধ শিশুকাল থেকে জেগে ওঠেছিল যা পরবর্তীতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ২৩ মিনিেিটর বক্তব্যে বলেন, সে সময় তিনি খেলাধূলা করতেন, ব্রতচারি করতেন। জাতির পিতার জীবনটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর আমার দাদা সবসময় এসব ব্যাপারে আমার বাবাকে উৎসায়িত করতেন। তবে লেখাপড়ার দিকে অত্যান্ত গুরুত্ব দিতেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লেখা অসমপ্ত আত্মজীবনি পড়লে দেখবেন, আমার দাদা আমার বাবাকে একটা জিনিসই বলতেন যা কিছু কর-লেখাপড়া শিখতে হবে। রেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। এটাই ছিল তার উপদেশ। সে সাথে তিনি আরেকটি কথা বলেছেন, তিনি বলেছিলেন যে কোন কাজ করতে যাও সবসময় মনে রাখবে, সিনসিয়ারিটি অব পারপাস ও অনেস্টি অব পারপাস। এসব যদি থাকে জীবনে কখনও ব্যর্থ হবে না। সবসময় সফলতা আসবে।যে কাজ তুমি কবরে, তার প্রতি তোমার আন্তরিকতা এবং সবচেযে বড় কথা হলো সবসময় নিজেকে সততার সাথে চলতে হবে। সততা এবং আন্তরিকতা যদি থাকে তাহলে সবসময় যে কোন সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী লামিয়াতুল বারী ও স্বর্ণকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মোঃ আব্দুর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও ২৬ হাজার স্কুল সরকারিকরণ করে দেন। একটি বিধ্বস্ত দেশে সাংবাদিক শিক্ষক সকলের চাকরি সেসময় তিনি সরকারি করে দিয়েছিলেন। সকল ইন্ডাস্ট্রিসগুলো জাতীয়করণ করে শ্রমিকদের চাকরিও নিশ্চিত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার শাসনামলে শিশুদের উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন আমি শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার পদক্ষেপ নেই। ২০০০ সারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করে শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করি।২০১০ সালে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ প্রণয়ন করি। ছাড়া আমরা শিশু আইন ২০১৩ প্রণয়ন করি। ২০১৮ সালে আইন সংশোধন করে শিশুদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।শিশুর উন্নয়নে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শিশুদের জন্য শিশু সদন প্রতিষ্ঠা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচি চাল করি। শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং সারা বাংলাদেশে দুই কিলোমিটারের মধ্যে  যেন একেকটি প্রাইমারি স্কুল হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আগে আমাদের দেশে শতকরা ৪৫ ভাগ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করতো। আজকে আমাদের দেশে ৯৮ ভাগ শিশুরা স্কুলে যায়।পড়ালেখা করার সুযোগ পায়। মেযেশিশুরাতো স্কুলে যেতেই পারতো না। আমরা তাদের জন্য সকর ব্যবস্থা করে দিয়েছ্ িকারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছি।কারিগরি শিক্ষার হার ছিল মাত্র ০.৮ ভাগ। আজ তা আমরা ১৭.৮ ভাগে উন্নীত করেছি। আরও যাতে কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং পায় সে ব্যবস্থা করেছি। স্কুলগুলোতে আমরা কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি। কম্পিউটার ল্যাবের সাথে সাথে সারা বাংলাদেশে আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষা যেন শিশুকাল থেকে পায়- তা করে দিয়েছি।
শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ সমপর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের ঝরে পড়ার হার ৪৯ ভাগ শতাংশ ছিল। আজকে তা আমরা ১৩.৫ ভাগে নামিয়ে এসেছি। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশে ছিল মাত্র ৬৫ হাজার ৬৭২ টি। এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সাক্ষরতার হার ছিল  ৪৫ ভাগ। আজকে যা ৭৬.৮ ভাগে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শিশুদের প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছি।ওই বৃত্তির টাকা তাদের মায়ের নামে সরাসরি চলে যাচ্ছে।বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি। শিশুদের টিফিনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
শিশুদের অইন কানুন ও নীতি নৈতিকতার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিশুরা যাতে সুন্দর পরিবেশে মানুষ হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য দিচ্ছি এবং সেই সাথে সাথে এখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক , অবিভাবক ও মা-বাবারা এখানে আছেন শিশুদের ছোট বেলা থেকে কতগুলি শিক্ষা দিতে হবে - যা একান্তভাবে শিশুদের অপরিহার্য। সেটা হলো, রাস্তায় চলতে গেলে কতকগুলো নিয়ম মানতে হয়। ট্রাফিক রুল-নিয়মটা যেন শিশুদের ছোট্ট বেলা থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। যাতে করে শিশুরা দূর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারে।সেই সাথে সাথে রাস্তায়কিভাবে নিরাপদে চলতে হবে এবিষয়েও শিশুদের শিক্ষা দেওয়া উচিত।
শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন ও মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন হয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  শিশুদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার শিক্ষা দিতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী, অ্যাথেস্টিক এধরনের শিশুদের সাথে যেন কেউ দূর্ব্যবহার না করে, তাদেরকে আপন করে নিতে শিক্ষা দিতে হবে। তাদের সাথে ভাল আচরণ করা এবং উত্যাক্ত না করার শিক্ষা দিতে হবে।তাদের সহনুভ’তিশীল দৃষ্টিতে দেখতে হবে।পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরে এ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশপাশি যে কোন  অপচয়  বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি এভাবে মানুষের মতো মানুষ ও সহনুভুতিশীল হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিবসগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অজ্ঞতা অনিহা সম্পকে শেখ হাসিন বলেন, আমাদের অনেকগুলো বিশেষ দিবস আছে যেমন- আজকে যেমন শিশু দিবস ১৭ মার্চ জাতির পিতার জম্মদিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের ভাষা দিবস। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এদিন জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যার যা কিছু আছে-তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তাই করেছিল। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। যেদিন আমরা যুদ্ধ করে শত্রুদের পরাজিত করে বিজয অর্জন করেছিলাম। আমাদের শিশু, কিশোর, ছাত্র, যুবকরা এ প্রশ্নটা আসলে এড়িযে যাবে কেন? এড়িয়ে যাবে কেন? কাজেই এইশিক্ষাটা তাদের যথাযথভাবে দিতে হবে। বিজয়ী জাতি আমরা আমরা কি করে ভুলে যাব যে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি! কাজেই সেই বিষযে আমি সকলের মনযোগ আকর্ষণ করছি।
প্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট বেলা থেকে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে, আজকের শিশুরা  ডিজিটাল যুগের। ডিজিটাল শিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। এখন আমাদের ভবিষ্যত দেখতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। এই শিশুরাই একদিন এই প্রযুক্তি ব্যবহার শিখবে। বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা অর্থাঃ উন্নত সমৃদ্ধ বাঙলাদেশ গড়ে তোলার মুল নেতৃত্ব আজকের শিশুরাই দেবে-এটাইতো আমাদের লক্ষ্য। সেভাবে আমাদের শিশুদেরকে বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, একই সাথে শিশুদের খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।আমাদের শিশুরা খেলাধূলায় যথেষ্ট পারদর্শীতা দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায় তারা দক্ষতা দেখাচ্ছে।খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও বই পড়াসহ সকল বিষয়ে শিক্ষা দেওযার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। ইতোমধ্যে আমরা বেতনসহ শিশুদের বাবাদের কাজ করা ও মায়েদের মাতৃত্বকালিন ছুটির ব্যবস্থা করেছি ।যাদের কর্মজীবি মা তাদের জন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়ে ছিলেন।
শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিষযে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিশুদের বলবো তারা যেন শিক্ষকদের কথা মেনে চলে, গুরুজনদের কথা মেনে চলে। অবশ্য আমি একটি কথা না বলে পারছি না। এটা শিশুদের অনুষ্ঠান্ কিন্তু আমার সামনে বেশ বয়সবৃদ্ধ শিশুরা বসে আছেন। আর শিশুরা পিছনে বসে আছে। কেন তারা পিছনে থাকবে ? আমার অনুরোধ থাকবে এরপর যখন শিশুদের অনুষ্ঠান হবে অন্তত সামনের সারিতে আমাদের শিশুরা থাকবে। শিশুদেরতো আমি দেখতে পারছি না। তোমরা দূরে থাকলেও, আমার হৃদয়ে আছো। শিশুদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। ছোট বেলা থেকেই সততার শিক্ষা দিতে হবে। তাদের লেখাপড়, ছবি আঁকা, খেলাধূলা, ধর্মীয় শিক্ষাসহ সবধরনের কালিকুলামের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকতে হবে। অভিবাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে ছোট বেলা থেকেই তাদের মধ্যে মানবিক গুন থাকে সেদিকে দেখবেন। এইশিশুদের মধ্যে যেমন সুপ্ত মেধা আছে, মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ যেন তারা পায়। লেখাপড়া খুবই দরকার।লেখাপড়ার জন্যমিশুদের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করবেন না। আমরা চাচ্ছি খেলাধূলার মধ্যদিয়ে শিশুরা তাদের লেখাপড়া শিখবে। যাতে তাদের মধ্যে সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ পায় সেইভাবে আমরা কারিকুলাম তৈরী করে এগিযে নিয়ে যাচ্ছি। এখনতো ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিশুরা বিশ^টাকে সামনে দেখতে পায়। শুধু বই পড়া না চোঁখে দেখেও শিখতে পারে।এরপর তারা হবে এক স্মার্ট বাংলাদেশের, স্মার্ট নাগরিক সেটাই আমরা তাই চাই।
তিনি বলেন, আজকের শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনবো হাসি সবার ঘরে’। একটা যথার্থ প্রতিপাদ্য গ্রহন করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।আমি চাই আমার দেশের প্রত্যেকটি শিশু নিরাপদ জীবন ও উন্নত পায়-সেটাই আমার কামনা।
চিরচারিত স্বভাবে প্রধানমন্ত্রী কবি সুকান্তের অনন্য কবিতার একটি পংক্তিমালা উচ্চরণ করে বলেন, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, তারপরে পৃথিবীর সরাব ঝঞ্চাল, এ বিশ^কে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি , নবজাতকের কাছে এই আমার অঙ্গীকার।’এই দৃঢ় অঙ্গীকার করে আজকের শিশু আগামী দিনে আমাদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে-এটাইআমার শিশুদের কাছে অঙ্গীকার।
এরআগে এরআগে, বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার বিষয়ক প্রামাণ্য চিত্র “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনবো হাসি ঘরে ঘরে’- প্রদশর্ণ, সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান এবং ১০৪ জন অস্বচ্ছল, মেধাবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মারক উপহার দেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুর আলম।
এরপর প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে এসে বসেন এবং শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং  শিশুদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ প্রাঙ্গনে আযোজিত  বই মেলা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আঁকা চিত্র প্রদর্শর্নীর উদ্বোধন করেন।
রোববার সকাল সোয়া ১০টায়  সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে এসে পৌছান। প্রধানমন্ত্রী মাধিসৌধ কমপ্লেক্সে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে স্বাগত জানান।
সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে মিনিটে প্রথমে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তাবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তাবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানান। স্বাধীনতার মহান স্থাপতি প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে কিছুক্ষণ তিনি সেখানে নীরবে দাড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল জাতির পিতাকে গার্ড অনার প্রদান করে। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্ম্দ সাহাবুদ্দিন ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতাসহ ১৫’ আগস্টে নিহত শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহবুদ্দিন সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে রক্ষিত বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বঙ্গবন্ধু ভবনে যান। সেখাসেন কিছু সময় অবস্থানের পর আবার তিনি হেলিক্যাপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আব্দুর রাজ্জাক এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বে-সামরিক বিমান চলাচল ও পর্যাটন মন্ত্রী মুহা. ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকু এমপি, আওয়ামী লীেেগর যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আফম বাহউদ্দিন নাসিম এমপি, মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, আওযামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আকরাম উদ্দিন আহম্মেদ, শেখ কবির হোসেন, শেখ হেলাল উদ্দিন, এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি শহীদুল্লা খন্দকার, নাজমা অকতার এমপি, ব্যারিস্টার ফজলে নাঈম, জেলা  আওযামীলীগ সভাপতি মাহবুব আলি খান, সাধারন সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম, টুঙ্গিপাড়া আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুর বাশার খাযের, সাধারন সম্পাদক মোঃবাবুল শেখ, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র তোজাম্মেল হক টুটুলসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

এইচবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৫:২৬ ● ৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ