হাইকোর্টে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনা

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » হাইকোর্টে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনা
মঙ্গলবার ● ১২ মার্চ ২০১৯


---

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ইতিহাস ‘বিকৃতির’ দায় নিয়ে উচ্চ আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা। মঙ্গলবার তলবে হাজির হয়ে ‘বিকৃতির’ দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আজিজ উল্লাহ ইমন ও শুভঙ্কর সাহার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান।
আইনজীবী আজিজ উল্লাহ ইমন পরে সাংবাদিকদের বলেন, এরইমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আভ্যন্তরীণ নোটিস দিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সব কপি তুলে নিয়েছে। আর নতুনভাবে প্রকাশিত বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি ছাপানোর ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহাকে তলব করে। সেই সাথে ইতিহাস বিকৃতি ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ মন্তব্য করে আদালত বইটির সব পুরনো কপি বাজার থেকে তুলে নিতে বলেছিল। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার হাই কোর্টে হাজির হয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান শুভঙ্কর সাহা। তিনি আদালতকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বই প্রকাশে একটি টিম দায়িত্বে ছিলেন। আমরা বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান, সাতই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা- এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রিলেটেড বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি না পাওয়ায় বইয়ে বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি দেওয়া হয়নি। এইজন্য আমি আদালতের কাছে পুরো টিমের পক্ষে ক্ষমা চাচ্ছি। এসময় আদালত বলে, আইয়ুব খান, মোনায়েম খানকে বইতে হাইলাইট করলেন অথচ বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও পেলেন না? জবাবে শুভঙ্কর বলেন, বইতে আইয়ুব খানকে স্বৈরাচার হিসেবেই অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। এ পর্যায়ে তিনি আবারও দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ক্ষমা চেয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। জাঁতি ক্ষমা করতে হবে। এরপর আদালত প্রকাশিত ওই বইগুলো কী করা হয়েছে, তা হলফনামা আকারে বিস্তারিত জানানোর নির্দেশ দিয়ে ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখে। আইনজীবী এ বি এম আলতাফ বলেন, ইতিহাস বিকৃতির দায় স্বীকার করে শুভঙ্কর সাহা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চাইলেও আদালত তা গ্রহণ করেনি। ফলে পরবর্তী তারিখে তাকে আসতে হবে। আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে ২০১৩ সালে এ বইয়ের পা-ুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটি করা হয় সে সময়। বইটি প্রকাশের আগে সম্পাদনার দায়িত্বে বেশ কয়েক বার রদবদল হয়।
সর্বশেষ এ দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকের তখনকার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা। তার আগে দায়িত্ব পালন করেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মাহাফুজুর রহমান। তারা দুজনই অবসরে গেছেন। পা-ুলিপি চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক খোলা কাগজে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইতে পাকিস্তানের ভূত- ঠাঁই পাননি বঙ্গবন্ধু, আছে স্বৈরাচার আইয়ুব খান’ এবং পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে পাকিস্তানের ভূত- দূরবিনেও মেলে না প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগের অবদান’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর বইটির বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন গভর্নর। পাশাপাশি বইটি নতুন করে সম্পাদনা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দেন। এরই মধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে এফবিসিসিআই পরিচালক কাজী এরতেজা হাসান হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ২ অক্টোবর হাই কোর্ট ইতিহাস বিকৃতি অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে জারি হয় রুল। ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতি করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। হাই কোর্টের নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। …গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে। এ কারণে বইটি প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয় কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বইটি প্রকাশের জন্য গঠিত গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৭:২৪ ● ৪৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ