দুমকি(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের ত্রি-মুখী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বহি:স্কার দাবিতে ক্লাশ ও পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জণ করে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট, প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে শিক্ষকরা। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা প্রকাশ করে প্রতিবাদ বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। অপর দিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তার শাস্তি ঠেকাতে কর্মকর্তারাও মানববন্দন সমাবেশের ত্রি-মুখী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে কম্যাম্পাস।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে সাধারণ শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. জেহাদ পারভেজের সভাপতিত্বে সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুজ্জান মিয়াসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ সাধারণ শিক্ষকরা অভিযুক্ত কর্মকর্তার শাস্তির আদেশ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ক্লাশে না গিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেন। বেলা ১১টায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা পিএ টু প্রভিসি সামসুলহক রাসেল নামের ওপর ’ক্রস’ চিহ্ন একে ক্যাম্পাসে দেয়াল লিখণের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনাটিকে মুরগী চুরি অপরাধের সাথে তুলনা করে ওই কর্মকর্তাকে (সাসুল হক রাসেল) বাঁচাতে কর্মকর্তারাও একটি মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডেপুটি রেজিষ্ট্রার মো: সাইদুর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে সমাবেশে এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডেপুটি রেজিষ্ট্রার মো: ওয়াজকুরুনী তার বক্তৃতায় শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনাটিকে মুরগি চুরির অপরাধের সাথে তুলনা করে এতে তার (সামসুল হক রাসেল) ফাঁসি হতে পারেনা দাবি করেন। এমন ত্রি-মুখী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদিকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবিরতা, অপর দিকে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের মাঝে চাপা-ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ক্যাম্পাসের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় ৫সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠিত তদন্ত কমিটি গতকয়দিনে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা ভাবে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশক্রমে আজ বৃহস্পতিবার যে কোন সময়ে অভিযুক্তের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আদেশ হতে পারে। আর একারণেই শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ও অফিসার্স এসোসিয়েশন ওই কর্মকর্তার পক্ষে-বিপক্ষে ত্রি-মুখী চাপে চিরেচ্যাপ্টা অবস্থায় রয়েছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু ত্রি-মুখী আন্দোলনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনার পর দিনই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে তদন্ত রিপোর্টের কোন তথ্য প্রকাশ করতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় পবিপ্রবির কৃষিকুঞ্জের ডাইনিং রুমে এনএফএস অনুষদের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে একই বিভাগের শিক্ষক শেখ তানজিলা দোলার পক্ষ নিয়ে প্রভিসি’র পিএ সামসুল রাসেল অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। লাঞ্ছিতের শিকার সহকারি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঘটনাটি শিক্ষক সমিতিকে লিখিত ভাবে জানানো হলে অভিযুক্তকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে ৩দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ক্লাশ বর্জণসহ লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয়। শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। অপর দিকে অভিযুক্তের পক্ষ নেয় কর্মকর্তারা। ফলে ত্রি-মুখী আন্দোলনে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।
এমআর