আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
মোর পোলাডারা নির্যাতন কইর্যা ছালাম গাজী ও হ্যার পোলা নজরুল মাইর্যা হালাইছে। মুই এ্যাহন ক্যারে লইয়্যা বাঁচমু। মুই ছালাম ও হ্যার পোলা নজরুলের বিচার চাই। কান্না জনিত কন্ঠে এমন অভিযোগ করেন নিহত বেলালের মা আকলিমা বেগম। ডেকোরেটর মালিক ছালাম গাজীর দাবী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক বেলাল মারা গেছে। পুলিশ নিহত শিশু শ্রমিক বেলালের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার ঘোপখালী বাজারে শনিবার রাতে। এ ঘটনার পরপর ডেকোরেটর মালিক ছালাম ও তার ছেলে নজরুল গাজী পলাতক রয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বেলাল মিয়া (১৬) গত ৬ বছর ধরে উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী বাজারের ছালাম গাজীর ডেকোরেটর দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। মা আকলিমা বেগমরে দাবী গত ছয় বছরে বেশ কয়েকবার মারধর করেছে। গত তিন মাস আগেও বেলালকে ছালাম গাজী ও তার ছেলে নজরুল গাজী লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই সময় বেলাল দোকান থেকে চলে আসে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায় বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠক হয়েছে। পরে আবারো বেলালকে ওই দোকানে কাজে নেয় ছালাম। বেলালের মায়ের আরও অভিযোগ শনিবার রাতে তার ছেলেকে ছালাম ও নজরুলসহ তার লোকজন নির্যাতন করেছে। ওই নির্যাতনে তার ছেলে বেলাল মারা গেছে। ডেকোরেটর দোকার মালিক ছালাম দাবী করেন রাতে দোকানে কাজ করা অবস্থায় বেলাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। ওই সময় দোকানে বেলাল ছাড়া আর কেউ ছিল না। এ ঘটনার পরপর ডেকোরেটর দোকান মালিক ছালাম গাজী ও তার ছেলে নজরুলসহ সকলে পালিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলালের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রবিবার সকালে পুলিশ তার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
নিহত বেলালের বড় বোন নাজমিন বলেন, আমার ভাইকে নির্যাতন করে এখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার ভাইকে যদি ছালাম নাই মারতো তাহলে তারা কেন পালিয়ে যাবে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, রাতে ছালামের ডেকোরেটর দোকানের সামনে বেলালকে পড়ে থাকতে দেখি। কিভাবে মারা গেছে তা আমরা বলতে পারিনা। তবে শুনেছি দোকান মালিক ছালাম বলেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।
ডেকোরেটর দোকান মালিক ছালাম গাজী নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, মাহফিল শেষে মালামাল দোকানে এনেছি। ওই মালামাল গোছাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, ওই সময়ে বেলাল একা ছাড়া কেউ দোকানে ছিল না।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) আমির সেরনিয়াত বলেন, বেলালের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আসল রহস্য বলা যাবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর