আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
‘মোগো কপাল পোড়া, বুড়া বয়সে খয়রাত করি, কেউ মোগো ভাতা দ্যায় না। আর কত বয়স অইলে মোরা বয়স্ক ভাতা পামু, অ্যারতে (হাটতে) পারি না, চোহে দেহি না, এ্যাক বেলা খাই, আর দুই বেলা না খাইয়্যা থাহি, মোরা বাাইচ্যা আছি না মইর্যা গেছি হেইয়্যার কেউ খোঁজ নেয় না। মেম্বরের ধারে গেছি, হে মোগো কিছুই কয় না। মুইতো চোহে দেহি না, বুড়িডায় দিনে খয়রাত করে। খয়রাত কইর্যা য্যা পায় হেইয়্যা দিয়া মোরা খাই। বুড়িডারও শরীলে বল নাই। সরকার এ্যাতো কিচু দেয় মোগো কিচুই দেয় না। পোলা নাই, ম্যাইয়্যা নাই মানের জাগায় ড্যারা দিয়া থাহি।’ কান্না জনিত কন্ঠে এসব কথা বলেছেন বরগুনার তালতলী উপজেলার তুলাতলী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল।
জানা গেছে, কৎভানুর সাথে বৈবাহিক সূত্রে বাবার ভিটে বরগুনার বালিয়াতলী গ্রাম ছেড়ে তালতলীর তুলাতলী গ্রামে বসবাস আব্দুলের। শ্রমিক আব্দুল গত ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস। এই দম্পতির কোন সন্তান নেই। আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ, হাটাচলা করতে পারে না। স্ত্রী কৎভানুর সহযোগীতায় চলতে হয় তাকে। ১০ বছর পূর্বে আব্দুলের দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। বর্তমানে স্ত্রী কৎভানুও অসুস্থ। যেদিন কৎভানুর ঝুলিতে চাল পড়ে সেই দিন তাদের খাবার ঝোটে। নইলে না খেয়েই থাকতে হয়। ওই নিঃসন্তান দম্পতি তুলাতলী গ্রামের কালামের পতিত জমিতে জরাজীর্ণ একটি ঘুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করেন। ঘরের অবস্থা এতই করুন বৃষ্টি হলেই পানিতে একাকার। সাদা চুলে ভ্রু কোকরানো আব্দুলের দৃষ্টি শক্তি একদমই নেই, শরীরে নেই তেমন কোনো বস্ত্র, চামড়া শরীরের সাথে মিশে গেচে। দিন কাটে বিছানায় শুয়ে। এই বুড়ো বয়সে দু’মুঠো ভাতের জন্য আবদুল ও কৎবানুর দুঃখের শেষ নেই। অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখেই কৎবানু ভিক্ষার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। কোন সরকারী ভাতা জোটেনি এই অসহায় দম্পতির। এতো বয়সে পাইনি কোন বয়স্ক ভাতা ও ভিজিডি। দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে ওই ভিক্ষুক দম্পতি। বার্ধক্যের কারণে এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই শারীরিকভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়েছেন। দৃষ্টি শক্তি হারানোর কারণে আব্দুল এখন পুরোপুরি অচল। কৎবানুর চোখেও পড়েছে ভারী ছানি।
বড় বগী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম লিটু জানান, গত দুই বছর ধরে ওই দম্পতিকে যথারীতি সহযোগীতা করে আসছি। ওই দম্পতির বয়স্ক ভাতা প্রয়োজন।
তালতলী সমাজসেবা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বর্তমানে বয়স্ক ভাতার তালিকার কার্যক্রম চলছে। ওই তালিকাতে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাশ শুভ বলেন, খোঁজ নিয়ে ওই দম্পতির সকল প্রকার সহযোগীতা করা হবে।