দশমিনা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আবাদি ও অনাবাদি জমিতে সরিষা ক্ষেতে হলুদ ফুলের হাসি শোভা পাচ্ছে। আর সে হাসিতে যেন কৃষকের মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি। ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় দিন দিন এই উপজেলার কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলার দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর হলুদ ফুলের সমারোহ। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এ হলুদের দৃশ্য। সবুজ গাছের মাথায় থাকা সরিষার হলুদ ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। ফুলে ফুলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি আর প্রজাপতি। সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের সৌন্দর্য্য দেখতে সকাল ও বিকালে ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সের নারী-পুরুষ। সরিষার ক্ষেত দেখতে ভ্রমন পিপাসুরা এবং সরকারি কর্মকর্তারাও পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটির দিনে ছুটে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকেরা বারি-১৪ সরিষা চাষ করেছেন। এ ফসলের তদারকি করছেন কৃষি কর্মকর্তা নিজেই। এবছর উচ্চফলনশীল বারি-১৪ সরিষা চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ ও সারসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়। কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ২০হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়ে ছিল। আর চলতি বছর ৩০হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। চাহিদা এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সরিষার চাষের দিকে দিন দিন ঝুঁকছেন। অনেক জমিতে এই ফসল চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে কৃষকদের বাড়তি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। আর এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষার চাষ। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৭শত হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়। কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় চাষীরাও বেশ খুশি। সরিষা ফুলের নজরকাড়া সৌন্দর্য পুলকিত করে যে কাউকেই। সেই সাথে তেল হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। বলা হয়ে থাকে সয়াবিনের চেয়ে সরিষার তেল বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই কারণে উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে সরিষার চাষ। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক চাষী এবার সরিষার চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে আছে হলুদ ফুলের সমারহ। উপজেলার কৃষকরা বলেন, সরিষা চাষ করতে খরচ কম আর লাভ বেশি। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় সরিষা চাষ করছেন অনেকেই। আগামীতে চাষের আগ্রহও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানী গ্রামের মোঃ মোহাম্মাদ হোসেন জানান, আমন ধান আবাদের পরে লাগিয়ে সরিষার চাষ করেছি। আর হয়েছেও ভালো ফলন। ধান চাষের পরে জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতে চাষাবাদ হচ্ছে সরিষা। তিনি আরও বলেন, তেল জাতীয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষার বীজে তেলের পরিমানও বেশি। নজরকাড়া সৌন্দর্য, সেই সাথে তেল হিসেবে সরিষার ব্যবহার রয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলে বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে যেন হলুদের হাসি বিরাজ করছে। সরিষা চাষ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এলাকার কৃষকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। আবাদ সংকল্প দেখে মনে হয় এমন পরিশ্রমী কৃষকদের জন্যই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি কৃষকরা নতুন করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
উপজেলার সংকল্পিত কৃষকরা উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া, মধ্য বাঁশবাড়িয়া, গছানী, ঢনঢনিয়া, চরহোসনাবাদ, নেহালগঞ্জ, আদমপুর, বহরমপুর, বগুড়া, দশমিনা, হাজিকান্দা, গোলখালী, আরজবেগী, সৈয়দজাফর, লক্ষীপুর, নিজাবাদগোপালদী, বেতাগী-সানকিপুর, জাফরাবাদ, মাছুয়াখালী, আলীপুর, যৌতা, খলিশাখালী, চাঁদপুরা, রণগোপালদী, আউনিয়াপুর, গুলি, চরঘুনি, চরবোরহান, চরশাহজালাল, চরহাদি গ্রামে এই বছর বাড়তি লাভের আশায় সরিষা আবাদ করছে।
উপজেলার চরহাদীর কৃষক জামাল গাজী জানান, গত বছরের চেয়ে এই বছর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করছি। ব্লক পদ্ধতিতে কৃষক প্রায় ১০ একর জমির চাষাবাদ সম্পন্ন করেছে। আশানুরূপ ফলন পাবে বলে আশা করছে।
উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। আর এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষার চাষ। আশানুরূপ ফলন পেতে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছে। তবে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ভালো ফলন হয়েছে। সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের সরিষার ক্ষেত ঘুরে দেখতে আসা নুপুর রানী, সরমিলা, শুক্লা, লামিয়া বলেন, সরিষার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ক্ষেত। সেজন্য আমরা এক গ্রামের লোকজন মিলে দেখতে ও স্মৃতি হিসাবে ছবি তুলতে এসেছি। এসে অনেক ভালো লেগেছে।
উপজেলার কাটাখালী গ্রামের চাষি জয়নাল মৃধা জানান, চলতি বছর আমি ১একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আর ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকেরা আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া ভালো থাকায় সারা ক্ষেতে ফুল আর ফুল।
এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর আহাম্মেদ জানান, এই বছর উপজেলায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন সরিষার চাষ হয়েছে। ফুলে ফুলে সরিষার ক্ষেতে হলুদের আভা ও সৌন্দর্য সকলকেই বিমোহিত করে থাকে।
এসবি/এমআর